Breaking

Friday 9 September 2022

হুমায়ুন-শেরশাহ (মুঘল-আফগান) সংঘর্ষ এবং শুরী বংশ প্রতিষ্ঠা



শেরশাহ (1540-1545)

হুমায়ুন-শেরশাহ (মুঘল-আফগান) সংঘর্ষ এবং শুরী বংশ প্রতিষ্ঠা

[Humayun-Sher Shah (Mughal-Afghan) conflict and establishment of Suri dynasty]


সাসারামের একজন্য সামান্য জায়গীরদার থেকে শেরশাহ দিল্লির বাদশাহ হন। তিনি তাঁর সামরিক দক্ষতা ও রণকৌশলের মাধ্যমে প্রথমে বিহার পরে বাংলা অধিকার করেন। পরবর্তীকালে কনৌজ বা বিলগ্রামের যুদ্ধে (১৫৪০ খ্রি.) হুমায়ুনকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে উত্তর ভারতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। দিল্লির সিংহাসনে শূর-আফগান বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। নব প্রতিষ্ঠিত মুঘল রাজবংশের সামরিক প্রতিরোধ ঘটিয়ে ভারতীয় রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে উল্কার মতোই শেরশাহের আবির্ভাব ঘটে। অতি সামান্য সময়ে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং রাজস্ব প্রশাসনে তিনি যে অবদান রেখেছেন তা ইতিহাসে চির অম্লান। এক্ষেত্রে তিনি মৌলিকত্ব এবং উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী ছিলেন । শেরশাহের সংস্কারাবলী ছিল ভারতীয় রাজস্ব ও ভূমি ব্যবস্থাপনার মূল ভিত্তি। পরবর্তীতে রাজা টোডরমলের বন্দোবস্ত এবং ব্রিটিশদের রায়তওয়ারী প্রথার মূলে ছিল শেরশাহের সংস্কার । স্বল্প সময়ে তিনি অভাবনীয় সাফলতার পরিচয় দিয়েছিলেন।







জন্ম ও পরিচয়:
মূল নাম           : ফরিদ
জন্ম                  : 1472 পাঞ্জাবে
বাবার নাম        : হাসান খান শুর, তিনি সাসারামের জায়গীরদার ছিলেন।
আদি বাসস্থান : আফগানিস্তানের অন্তর্গত তখত ই সুলাইমান পর্বত এলাকার শুর গরগাই নামক স্থানে। এজন্যই শেরশাহ প্রতিষ্ঠিত বংশের নাম শুরি বংশ।


শেরশাহ

আরও পড়ুন-


প্রাথমিক জীবন ও উত্থান-পতন:
মধ্যযুগের ভারতবর্ষের ইতিহাসে শেরশাহ অন্যতম উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। শেরশাহের অভ্যুত্থান তাঁর কর্মদক্ষতা ও প্রতিকূল অবস্থার বিরুদ্ধে সার্থক সংগ্রামের ইতিহাস। তাঁর পিতা হাসান জৌনপুরের শাসনকর্তা জামাল খাঁ লোহানীর অধীনে প্রথমে পাঞ্জাবে কর্মে নিযুক্ত হন এবং পরে জৌনপুরের অন্তর্গত সাসারামের জায়গীরদার হন। শেরশাহের বাল্যনাম ছিল ফরিদ (জন্ম ১৭৪২ খ্রি.)। তাঁর বাল্যজীবন বিমাতার অনাদর এবং লাঞ্ছনার সকরুণ ইতিহাস। বিমাতার প্ররোচনায় পিতা হাসান পুত্র ফরিদের প্রতি সম্পূর্ণ নিস্পৃহ ছিলেন। যুবক ফরিদ এই প্রতিকূল অবস্থায় 1494 সালে বাইশ বৎসর বয়সে পিতৃগৃহ ত্যাগ করে শিক্ষা-সংস্কৃতির কেন্দ্র জৌনপুরে গমন করেন। অসাধারণ মেধাবী ফরিদ অতি অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং ফারসি ভাষা ও সাহিত্যে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে জামাল খাঁ পিতা ও পুত্রের মধ্যে সদ্ভাব সৃষ্টি করেন। পিতা হাসান খান ফরিদকে সাসারামে ফিরিয়ে নিয়ে যান।

জায়গীর পরিচালনা:
সাসারামে প্রত্যাবর্তন করে ফরিদ রোটাসে দু'টি পরগণার (সাসারাম ও খোয়াসপুর) পরিচালনার ভার পান। এভাবে ফরিদের শাসনকার্য বিষয়ে শিক্ষার সূচনা হয়। কিন্তু তাঁর এই কৃতিত্বে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিমাতা চক্রান্ত করে তাঁকে 1518 সালে পুনরায় গৃহত্যাগে বাধ্য করেন। পিতার মৃত্যুর পর দিল্লির সুলতান ইব্রাহিম লোদী প্রদত্ত অধিকার বলে তিনি সাসারামের পৈতৃক জায়গীর লাভ করেন। অতপর ১৫২২ খ্রি. বিহারের সুলতান দারিয়া খাঁন লোহানীর পুত্র বাহার খাঁর অধীনে চাকরি নেন।

শের খান উপাধি লাভ:
এ সময়ে একবার সুলতান বাহার খাঁর সঙ্গে শিকারে গিয়ে ফরিদ কারো সাহায্য ছাড়া একাই একটি বাঘ মেরেছিলেন বলে তাঁর সাহসিকতার জন্যে সুলতান কর্তৃক ‘শের খাঁ' উপাধিতে ভূষিত হন। কিন্তু ভাগ্য বেশিদিন তাঁর প্রতি সুপ্রসন্ন রইল না। শত্রুদের (সৎভাইদের) প্ররোচনায় তিনি পুনরায় তাঁর পিতার জায়গীর থেকে বিতাড়িত হন।

বাবুরের অধীনে শের খান:
এই সময় বাবুর পানিপথের প্রথম যুদ্ধে (১৫২৬ খ্রি.) ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করলে শের খাঁ মুঘলদের শক্তিতে মুগ্ধ হয়ে বাবুরের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন। বাবুরের সহায়তায় তিনি সাসারামের জায়গীর ফিরে পান (১৫২৮ খ্রি.)।

সুরুজগরের যুদ্ধ ও বিহার দখল:
এর কিছুদিন পর বিহারের সুলতান বাহার খাঁর মৃত্যু হলে শের খাঁ বিহারের নাবালক শাসনকর্তা জালাল খাঁর অভিভাবক নিযুক্ত হন।ধীরে ধীরে সৈন্যবাহিনীর ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে তিনি বিহারের প্রকৃত শাসনকর্তায় পরিণত হন। এই সময় চুনার দুর্গের অধিপতি তাজ খাঁর মৃত্যু হলে তিনি তাঁর বিধবা পত্নীকে বিবাহ করে চুনার দুর্গের অধিপতি হন (১৫৩০ খ্রি.)। শের খাঁর এই অস্বাভাবিক ক্ষমতাবৃদ্ধিতে আফগানগণ ঈর্ষান্বিত হয়। সুলতান জালাল খাঁ শের খাঁর অভিভাবকত্ব থেকে মুক্ত হতে চাইলেন। তিনি বাংলার সুলতান মাহমুদ শাহের সাহায্যে শের খাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করলে শের খাঁ ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে সুরুজগড়ের যুদ্ধে বাংলা ও বিহারের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে বিহারের শাসন ক্ষমতা অধিকার করেন। এই যুদ্ধে জয়লাভের ফলে কার্যত তিনি বিহারের সুলতান পদে অধিষ্ঠিত হলেন। এই সময়ে তাঁর ক্ষমতার পরিচয় পেয়ে আফগান অভিজাতবর্গ তাঁর নেতৃত্বাধীনে সমবেত হন।


আরও পড়ুন-



মুঘল-আফগান দ্বন্ধ- সংঘাত

(1530-1540)

মুঘল-আফগান সংঘাতের কারণ:
  1. আফগানরা মুঘলেদর কাছে ক্ষমতা হারিয়েছিল;
  2. আফগান শক্তির চুড়ান্ত ধ্বংস না হওয়া;
  3. আফগানেদর জাতীয়তাবাদী চেতনা।

শের খানের বাংলা অধিকার:
সুরুজগড়ের যুদ্ধে জয়ী হয়ে শের খাঁ বাংলায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেন। মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের গুজরাট অভিযানের সুযোগে শের খাঁ গৌড়ের নিকট উপস্থিত হলে দুর্বল মাহমুদ শাহ তাঁর সঙ্গে সন্ধি করেন। সন্ধির শর্তানুযায়ী তের লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা ও কিউল হতে সক্রিগলী পর্যন্ত শের খাঁকে দিতে বাধ্য হলেন। কিন্তু এতেও বাংলা আফগান আক্রমণ থেকে রক্ষা পেল না। ১৫৩৭ খ্রি. বাংলা অধিকার করার জন্যে শের খাঁ পুনরায় বাংলা আক্রমণ করে গৌড় অবরোধ করেন। এই সময় হুমায়ুন গুজরাট অধিকার সমাপ্ত করে আগ্রায় সুখে কালাতিপাত করছিলেন।

হুমায়ুনের চুনার দুর্গ অবরোধ:
শের খাঁর ক্ষমতা বৃদ্ধিতে শঙ্কিত হয়ে হুমায়ুন অবশেষে তাঁর বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। কিন্তু হুমায়ুন বাংলায় না গিয়ে শের খাঁর চুনার দুর্গ অবরোধ করেন ১৫৩৭ সালে। শের খান এখানে ছিলেন না অথচ হুমায়ুন 6 মাস যাবত এই দুর্গ অবরোধ করে রাখেন। এটা ছিল হুমায়ুনের ও দূরদর্শিতার পরিচয়এই সুযোগে শের খাঁ গৌড় এবং রোটাস দুর্গেও নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন।

হুমায়ুনের বাংলা অধিকার(1538):
বাংলায় শেরখানের শক্তি বৃদ্ধিতে হুমায়ুন চুনার দুর্গ দখল করে বাংলার দিকে অগ্রসর হন ।হুমায়ুনের আগমনের সংবাদ পেতে ধূর্ত শেরশাহ হুমায়ুনের সাথে সংঘর্ষে না গিয়ে অন্য পথে বাংলা থেকে বেরিয়ে যান ।হুমায়ুন বাংলা দখল করে বাংলার নাম রাখেন জান্নাতাবাদ এবং এখানে তিনি আমোদ প্রমোদে প্রায় নয় মাস অতিবাহিত করেন।

চৌসার যুদ্ধ (১৫৩৯):
শের খান বাংলা থেকে বের হয়ে বিহার ও জৌনপুরের মোগল অধিকৃত অঞ্চলগুলো জয় করে কনৌজ পর্যন্ত অগ্রসর হন।এসব এলাকায় শেরশাহের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় কার্যত হুমায়ুনের দিল্লির ফেরার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। শের খাঁর এরূপ কার্যকলাপে হুমায়ুন চিন্তিত হন এবং তিনি আগ্রায় প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। ফেরার পথে বক্সারের নিকট চৌসায় ১৫৩৯ খ্রি. হুমায়ুনের সঙ্গে শের খাঁর সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে হুমায়ুন সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হয়ে কোন রকমে প্রাণ নিয়ে আগ্রায় প্রত্যাবর্তন করেন। শের খাঁর রাজ্য লাভের ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা হলো চৌসার যুদ্ধে জয়লাভ।

শেরশাহ’ উপাধি ধারণ (১৫৩৯):

এই বিজয় দ্বারা শের খাঁ বাংলা, বিহার ও আসামের এক বিস্তৃত অঞ্চলের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেন এবং ‘শেরশাহ' উপাধি গ্রহণ করে নিজনামে মুদ্রা অঙ্কিত করেন।

কনৌজের/ বিলগ্রামরে যুদ্ধ(১৫৪০):
পরের বৎসর ১৫৪০ খ্রি. হুমায়ুন পুনরায় শেরশাহের বিরুদ্ধে অগ্রসর হলে কনৌজ বা বিলগ্রামের যুদ্ধে পুনরায় চূড়ান্তভাবে পরাজিত হন। এই যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে হুমায়ুন সিংহাসনচ্যুত হয়ে ১৫৪০-১৫৪৫ খ্রি. পর্যন্ত পনর বৎসর দেশ থেকে দেশান্তরে আশ্রয়ের খোঁজে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য হন।

শেরশাহের দিল্লি-আগ্রা দখল এবং শুর বংশ প্রতিষ্ঠা (১৫৪০) :
কনৌজের/ বিলগ্রামরে যুদ্ধে জয় লাভের পর শেরশাহ উত্তর ভারতের অবিসংবাদী শাসকরূপে দিল্লির আর্বিভূত হন। তিনি দ্রুত দিল্লি এবং আগ্রা দখল করেন এবং তাঁর দিল্লি সিংহাসনে আরোহনের মাধ্যমে সুর বংশের প্রতিষ্ঠা করেন এবং মুঘল বংশের সাময়িক পতন ঘটে।



আরও পড়ুন-





শেরশাহের রাজ্য বিস্তার:
দিল্লির সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে শেরশাহ পাঞ্জাব অধিকার করেন (1540)। এই সময়ে (১৫৪১ খ্রি.) বাংলার শাসক খিজির খাঁ বিদ্রোহ ঘোষণা করলে তিনি পাঞ্জাব থেকে বাংলায় এসে খিজির খাঁকে বন্দি করেন। অতপর তিনি বাংলায় নতুন এক শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। সামরিক ব্যবস্থার পরিবর্তে বেসামরিক শাসন কায়েম করেন। শেরশাহ বাংলাকে ১৯টি সরকারে বিভক্ত করে প্রত্যেকটি সরকারের শাসনভার একজন আমীনের ওপর অর্পণ করেন। বাংলার শাসকরূপে তাঁর এক বিশ্বস্ত অনুচরকে অধিষ্ঠিত করেন। তিনি বাংলার শাসনকর্তাকে ‘আমীন-ই-বাংলা' উপাধিতে ভূষিত করেন।অতপর তিনি সাম্রাজ্য বিস্তারে রাজপুতনার দিকে মনোনিবেশ করেন।

১৫৪২ খ্রি. তিনি মালব অধিকার করেন। মালব থেকে আগ্রা প্রত্যাবর্তনের পথে রণথম্ভোর দুর্গ অধিকার করেন। পাঞ্জাবের শাসনকর্তা হায়াৎ খাঁ নিজামী পাঞ্জাবের মন্টোগোমারী জেলার বিদ্রোহী ফথ খান জাঠকে দমন করে পরে মুলতান অধিকার করেন।

১৫৪৩ খ্রি. শেরশাহ সিন্ধুর ভাক্কার ও সেহওয়ান দুর্গ দু'টি অধিকার করেন। একই বৎসর চান্দেরী ও রাইসিন দুর্গ অধিকার করেন। অতপর তিনি মাড়ওয়ারের মালদেবের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। কূটকৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে তিনি রাজপুত সেনাপতিদের পরাজিত করেন। ঐ বছরই তিনি যোধপুর অধিকার করেন।

১৫৪৪ খ্রি. মেবারের রাজধানী চিতোরের পতন ঘটে। শেরশাহের সর্বশেষ অভিযান ছিল বুন্দেলখন্ডের কালিঞ্জর দুর্গ অবরোধ। আহমদ ইয়াদগারের বিবরণ থেকে জানা যায়, সাম্রাজ্যহারা হুমায়ুনের সঙ্গে কালিঞ্জরের রাজা বন্ধুত্ব রেখেছিলেন। এই কারণে শেরশাহ ১৫৪৪ খ্রি. কালিঞ্জর দুর্গ অধিকারের জন্যে অভিযান করেন।


শেরশাহের মৃত্যু (১৫৪৫):
কালিঞ্জর দুর্গ অবরোধকালে একটি গোলা দুর্গের দরজায় আঘাত পেয়ে প্রতিহত হয়ে শেরশাহকে আঘাত করে। এই গোলার আঘাতে শেরশাহ ১৫৪৫ খ্রি: ২২ মে মৃত্যুবরণ করেন।কিন্তু মৃত্যুর সময় কাশ্মির, গুজরাট, আসাম ছাড়া সমগ্র উত্তর ভারত তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাঁর সাম্রাজ্য পশ্চিমে সিন্ধু থেকে উত্তর-পশ্চিমে গোক্কর দেশ, উত্তরে হিমালয় থেকে পূর্বে আসাম এবং দক্ষিণে বিন্ধ্য পর্বত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।


হুমায়ুনের পরাজয় ও শেরশাহের সাফল্যের কারণ:


উত্তরাধিকারসূত্রে দুর্বল সাম্রাজ্য প্রাপ্তি
জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর কর্তৃক মুঘল বংশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মাত্র চার বছরের মাথায় তিনি ইন্তেকাল করেছিলেন সাম্রাজ্যকে সুসংহত করার মত সময় তিনি পাননি বলে উত্তরাধিকারসূত্রে হুমায়ুন একটি দুর্বল সাম্রাজ্য লাভ করেছিলেন সেটাকে সুসংহত করার জন্য বাবার মত দক্ষতা ও কূটনৈতিক শক্তি তার ছিল না।

সাম্রাজ্যের বিভাজন
বাবর এর মৃত্যুর পর তার সম্রাজ্য তার চার পুত্রের মধ্যে ভাগ হয়ে গিয়েছিল এবং কারো সাথে কোন প্রকারের মৈত্রী তা ছিল না ফলে কার্যত মুঘল সাম্রাজ্য এককেন্দ্রিক থাকেনি । আফগান নেতা শের খান এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন।


হুমায়ুনের সামরিক ও রাজনৈতিক দক্ষতার অভাব
শের খানের মতো রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক এবং সামরিক দক্ষতা হুমায়ুনের ছিল না।হুমায়ুন ছিলেন রাজনৈতিকভাবে অদূরদর্শী ফলে শের খান এর সাথে প্রত্যেকবারই তিনি পরাজিত হয়েছেন।


হুমায়ুনের ব্যক্তিগত দুর্বলতা:
সম্রাট হুমায়ুন ছিলেন সহজ সরল প্রকৃতির। তার কুট বুদ্ধি ছিল না বললেই চলে। হুমায়ুনের নিজের ব্যর্থতার জন্য তার এই ব্যক্তিগত দুর্বলতা অধিক সরলতা অনেকাংশে দায়ী।


আপনজনদের অসহযোগিতা
সম্রাট হুমায়ুন তার ভাই এবং আত্মীয় স্বজনদের প্রতি ছিলেন অত্যান্ত স্নেহাশিস এবং দয়ালু প্রকৃতির। কিন্তু তার ভাইয়েরা সবাই তার সাথে শত্রুতা করেছে এবং তার বিপদের সময়ে কেউই তাকে সহায়তা করেনি।


শের খান এর যোগ্যতা:
রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে হুমায়ুনের তুলনায় শেরশাহ ছিলেন অধিক যোগ্য রাজনীতির নৃপতি । সামরিক, রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক সর্ব দিক দিয়েই শেরখান হুমায়ুনের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন ফলে শেরশাহের সফলতা ছিল অনিবার্য আর হুমায়ুনের ব্যর্থতা ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার।

মধ্যযুগে সর্বত্র শাসকের ক্ষমতা ছিল অবাধ। সে হিসেবে শেরশাহও অবশ্যই নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তবে তিনি স্বৈরাচারী ছিলেন না। নিজ হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত রেখেও প্রদেশে কর্মচারীদের তত্ত্বাবধান করতেন। জনকল্যাণ সাধনই ছিল তাঁর শাসন ব্যবস্থার মূলনীতি। অষ্টাদশ শতকে ইউরোপে যে কয়জন রাজা অবাধ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে প্রজার কল্যাণে কাজ করেছেন তাঁদের সাথে ষোড়শ শতকে ভারতের শাসক শেরশাহের তুলনা করা চলে।


আরও পড়ুন-





Md. Billal Hossain
B.A. Honors (1st Class 4th), M.A. (1st Class 2nd), University of Dhaka
BCS General Education
Lecturer
Department of Islamic History & Culture
Chandpur Govt. College, Chandpur.

No comments:

Post a Comment