ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে অধ্যয়নরত সকল স্তরের শিক্ষার্থী এবং যারা ইসলামের সামাজিক, রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তাদের জন্যই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা । একাডেমিক পড়াশোনাকে সফট ও ডিজিটালাইজড করা এখন সময়ের দাবি। সে লক্ষ্যেই আমি একটি শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট খুলেছি এবং সেই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল আর্টিকেল সহজে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এই পেজটি খোলা হয়েছে। এখানে আমি; আইয়ামে জাহেলিয়া,হযরত মুহাম্মদ (সঃ), খোলাফায়ে রাশেদীন, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসীয় খিলাফত, আঞ্চলিক রাজবংশ,ফাতেমীয় খিলাফত, স্পেনে মুসলিম শাসন, মামলুক বংশ, অটোম্যান তুর্কি, দিল্লি সালতানাত,মোঘল বংশ,বাংলার ইতিহাস, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস,দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইসলাম, ইরান,আফগানিস্তান,মধ্য এশিয়া,আধুনিক মুসলিম বিশ্ব, আধুনিক ইউরোপ, সমসাময়ীক বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে থাকা সংখ্যালঘু মুসলমানদের অবস্থা, মোঙ্গল জাতি ও ইসলাম ধর্মে তাদের রূপান্তর প্রভৃতি বিষয়েপ্রবন্ধ উপস্থাপন করব ইনশাআল্লাহ।
ইসলামের ইতিহাস, ইতিহাস, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস এবং ইসলামিক থিওলজি বিষয়ে অভিজ্ঞ যে কেউ নিজের মৌলিক লেখা আমার এই পেজের মাধ্যমে আমার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে পারেন।
পাশাপাশি সমসাময়িক বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে ইসলামের ইতিহাস ও ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে তার মূল্যায়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রবন্ধ এখানে প্রকাশিত হবে। এছাড়া ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন বিধি-বিধান সংক্রান্ত বিষয়ে এখানে প্রবন্ধ উপস্থাপিত হবে। বৈশ্বিক পরিবর্তন ও প্রয়োজনীয়তার সাথে ইসলাম রিলেটেড বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপিত হবে।
বিষয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও ব্যাপ্তি
‘তারিখুল ইয়ামান’ গ্রন্থের ভূমিকায় ঐতিহাসিক খাযরাজি বলেন-
‘যে ব্যক্তি পূর্ববর্তীদের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে, সে যেন সুপ্রাচীনকাল থেকেই বেঁচে আছে। আর যে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য প্রশংসনীয় কিছু রেখে যায়, সে যেন পৃথিবীর শেষ লগ্ন পর্যন্ত বেঁচে থাকার সুখানুভূতি লাভ করে’।
ইসলামের ইতিহাস বলতে ইসলাম ধর্মের উদ্ভবের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কালানুক্রমে ইসলামের ইতিহাস, ইসলামী সভ্যতার রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নকে বুঝানো হয়। অধিকাংশ ঐতিহাসিক স্বীকার করেন যে খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীর শুরুতে মক্কা ও মদিনায় ইসলামের সূত্রপাত হয়। মুসলমানরা বিশ্বাস করে আদিকাল থেকেই অর্থাৎ প্রথম মানব আদমের সময় থেকেই ইসলাম ধর্মের প্রচলন শুরু হয়।
সাধারণত ৫৭০ সালের পূর্ববর্তী সময়কে আইয়ামে জাহিলিয়্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৫৭০ সালে ইসলাম ধর্মের প্রাণপুরুষ হযরত মুহাম্মদ (স) জন্মগ্রহণ করেন। ৫৭০ সালে তিনি নবুয়ত প্রাপ্ত হন এবং ৬২২ সালে তিনি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। সেখানে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। ৬৩২ সালে তাঁর ইন্তেকালের পর ইসলামে খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগের সূচনা হয় যা 661 পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। খোলাফায়ে রাশেদীনের সময়ে মুসলিম সাম্রাজ্য আরবের বাইরে পারস্য, মিশর এবং সিরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত লাভ করে। এসময় মুসলিম সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল মদিনা। হযরত আলী (রা) শেষ দিকে এসে রাজধানী মদিনা থেকে ইরাকের কুফাতে স্থানান্তর করেছিলেন। ৬৬১ সালে হযরত মুয়াবিয়া (রা) ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তা ৭৫০ পর্যন্ত টিকে থাকে। এসময় মুসলিম সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল সিরিয়ার দামেস্কে। উমাইয়া যুগে মুসলিম সাম্রাজ্য সর্বাধিক বিস্তার লাভ করে। এযুগে মুসলিম সাম্রাজ্য পশ্চিমে আটলান্টিক উপকূল এবং স্পেন, উত্তর-পূর্বে মধ্য এশিয়ার ট্রান্সঅক্সিয়ানা পেরিয়ে চীন সীমান্ত পর্যন্ত, পূর্বে ভারতের সিন্ধু পর্যন্ত এবং দক্ষিণে আরব সাগর পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে।
৭৫০ সালে উমাইয়াদের পতন ঘটিয়ে আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয় যা ১২৫৮ পর্যন্ত টিকে থাকে। এসময় মুসলিম সাম্রাজ্যের রাজধানী দামেস্ক থেকে বাগদাদে স্থানান্তরিত হয়। আব্বাসীয় যুগে মুসলিম সাম্রাজ্যে বিস্তৃতির চেয়ে তারা মুসলিম সমাজের উন্নতির দিকে দৃষ্টিপাত করে। এসময় জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিম সাম্রাজ্য সর্বাধিক সমৃদ্ধি লাভ করে। আব্বাসীয় যুগে একই সাথে মুসলিম বিশ্বে তিনটি খিলাফতের অস্তিত্ব দেখা যায়। বাগদাদ কেন্দ্রিক আব্বাসীয় খিলাফত, ৯০৯ সালে মিশর কেন্দ্রিক ফাতেমীয় খিলাফত এবং ৯২৯ সালে স্পেন কেন্দ্রিক উমাইয়া খিলাফত। এসময় গজনবী বংশ এবং ঘুরি বংশ মধ্য এশিয়া থেকে ভারতে মুসলিম আধিপত্যের সূচনা করে এবং ১২০৬ সালে ভারতে দিল্লি সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হয়। মিশরে ১১৭১ সালে ফাতেমীয় খিলাফতের পতন ঘটিয়ে আইয়ুবীয় বংশ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১২৫০ সালে আইয়ুবীয়দের পতন ঘটিয়ে মামলুক বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
১২৫৮ সালে হালাকু খান কর্তৃক বাগদাদ ধ্বংস এবং আব্বাসী বংশের পতন ঘটলে ২ বছর মুসলিম বিশ্ব খিলাফত শূন্য থাকে। ১২৬০ সালে মামলুক সুলতান রুকনুদ্দিন বাইবার্স মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া দুইজন আব্বাসীয় যুবরাজের মাধ্যমে মিশরে আব্বাসীয় খেলাফতের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। ফলে মুসলিম বিশ্বের খেলাফত বাগদাদ থেকে চলে যায় মিশরের কায়রোতে। এদিকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষ দিকে এশিয়া মাইনরে তুর্কি সালতানাতের উত্থান ঘটে। ১৫১৬ সালে মারজ-ই- দাবিকের যুদ্ধে তুর্কি সুলতান সেলিম এর হাতে মামলুক সুলতান কানসওয়া-আল-ঘুরী পরাজিত হলে মুসলিম বিশ্বের খেলাফত কায়রো থেকে চলে যায় তুরস্কে। ১৯২৪ সালে মোস্তফা কামাল পাশা কর্তৃক তুরস্ক থেকে মুসলিম বিশ্বের খিলাফতের বিলুপ্তি ঘটে।
উনবিংশ ও বিংশ শতকের গোড়ার দিকে ইসলামী বিশ্বের বেশিরভাগ অংশ ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। বিগত দুই শতাব্দীর পরিক্রমায় স্বাধীনতা অর্জন এবং আধুনিক রাষ্ট্র গঠনে মুসলিমদের প্রচেষ্টা আজ অবধি অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, জিনজিয়াং, চেচনিয়া, মধ্য আফ্রিকা, বসনিয়া, থাইল্যান্ডের পাতানি, দক্ষিণ ফিলিপাইনের মিন্দানাও এবং মায়ানমারের আরাকানের মতো অঞ্চলে সংঘাতময়-অঞ্চল তৈরি হয়েছে। তেল সম্পদ পারস্য উপসাগরের আরব রাষ্ট্রগুলিকে স্থিতিশীল করেছে, তাদেরকে বিশ্বের বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী এবং রফতানিকারক দেশে পরিনত করেছে, যা মুক্ত বাণিজ্য ও পর্যটনকে আকর্ষণ করে।
No comments:
Post a Comment