Breaking

Saturday 16 July 2022

মুহাম্মদ আলী পাশা এবং আধুনিক মিসর

   মুহাম্মদ আলী পাশা এবং  আধুনিক মিসর            

 (১৮০৫-১৮৪৯)

                                        





মোহাম্মদ আলী পাশা


মুহাম্মদ আলী পাশা আল-মাসউদ ইবনে আগা ছিলেন উসমানীয় সেনাবাহিনীর একজন আলবেনীয় বংশোদ্ভুত কমান্ডার। সমসাময়ীক কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বিকে পরাস্ত করে তিনি পাশা পদে পদোন্নতি লাভ করেছিলেন এবং নিজেকে মিশর ও সুদানের খেদিভ ঘোষণা করেছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি জাতীয়তাবাদী না হলেও সামরিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তার সংস্কারের ফলে তাকে আধুনিক মিশরের স্থপতি বিবেচনা করা হয়। মিশরের বাইরে তিনি সিরিয়া ও সুদান শাসন করেছেন এবং তুর্কি সুলতানের পক্ষে হেজাজ তথা মক্কা ও মদিনা ও তিনি দখল করেছিলেন । তার প্রতিষ্ঠিত মুহাম্মদ আলি রাজবংশ ১৯৫২ সালের বিপ্লবের আগ পর্যন্ত মিশর শাসন করেছে।


আরও পড়ুন-

প্রাক-মুসলিম মালয় জগতের উপর ভারতীয় ও চৈনিক প্রভাব: স্বরূপ ও তাৎপর্য



ক. জন্ম ও পরিচয়:

মুহাম্মদ আলী পাশা পূর্ব মেসিডোনিয়ার বন্দর নগরী কাভাল্লাতে এক আলবেনীয় পরিবারে  ১৭৬৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার সাক্ষাৎকার নেয়া অনেক ফরাসি, ইংরেজ ও অন্যান্য পশ্চিমা সাংবাদিক এবং তার চেনা পরিচিত লোকজনদের মতে তুর্কি ভাষায় কথা বলতে পারলেও তিনি শুধু আলবেনীয় ভাষায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা বলতে পারতেন। একটি মতানুযায়ী তার পূর্ব পুরুষরা তুর্কি ছিলেন এবং তারা দক্ষিণ-পূর্ব আনাতোলিয়া থেকে অভিবাসী হয়েছিলেন। তবে তার বংশধররা এই মত মানেন না। অন্যান্য ইতিহাসবিদদের মতে তার পরিবার জাতিগতভাবে আলবেনীয় এবং আলবেনিয়া তাদের আদি বাসস্থান। তার বাবা ইবরাহিম আগা ছিলেন তুর্কি স্থানীয় অনিয়মিত বাহিনীর সর্দার। মা জয়নব। মুহাম্মদ আলির অল্প বয়সে তার বাবা মারা যাওয়ার পর তার চাচার কাছে তিনি প্রতিপালিত হন। যিনি নগরের মেয়র ছিলেন।


খ. কর্ম জীবন:

শৈশব থেকেই মুহাম্মদ আলী অশ্বারোহন ও অস্ত্র চালনায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন। মুহাম্মদ আলীর চাচা তাকে কাভাল্লা শহরে কর সংগ্রহের জন্য  দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন। কর সংগ্রহে সাফল্যের পর মুহাম্মদ আলি তার চাচাত ভাই এর অধীনে কাভালা ভলান্টিয়াার কন্টিনজেন্টের সেকেন্ড কমান্ডার পদ লাভ করেছিলেন। মিসর থেকে নেপলিয়নের ফিরে যাওয়ার পর ১৮০১ সালে এই দলকে মিশর পুনরায় অধিকার করার জন্য পাঠানো হয়েছিলো। অচিরেই তিনি এই আলবেনীয় বাহিনীর প্রধান হন। মিসর থেকে আলবেনীয় বাহিনী চলে গেলেও তিনি তুর্কি পাশার অধীনে সরকারি চাকরিতে বহাল ছিলেন। 


গ.ক্ষমতায় আরোহন:

ফরাসিরা চলে যাওয়ার পর মিশরে ক্ষমতার শূণ্যতা তৈরী হয়। এ সময় মামলুক শক্তি টিকে থাকলেও দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সে সাথে ক্ষমতার প্রশ্নে উসমানীয়দের সাথে মামলুকদের সংঘাত সৃষ্টি হয়। এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে মুহাম্মদ আলী তার প্রতি অনুগত আলবেনীয় সেনাদের কাজে লাগান। 1801থেকে 1805 সালের মধ্যে উসমানীয় এবং মামলুকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় জনসমর্থন নিশ্চিত করার জন্য মোহাম্মদ আলী আন্তরিকভাবে কাজ করেছিলেন। সেই সময়ে, যখন খসরু পাশা, তাহের পাশা এবং খোরশিদ পাশা মিশরে শান্তি পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হন, তখন 1805 সালে, পণ্ডিত ও অভিজাতদের নেতৃত্বে গঠিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একটি দল আহমদ খুরশিদ পাশার পরিবর্তে মুহাম্মদ আলীকে ওয়ালি হিসেবে নিয়োগের দাবি জানায় এবং অটোমান সুলতান তা মেনে নেন। এভাবে জনগনের দ্বারাই মূলত তিনি মিসরের শাসক হিসেবে নিয়োজিত হন আর তুর্কি সুলতান নব নিযুক্ত পাশা হিসেবে তাকে অনুমোদন দেন।


ঘ. মামলুকদের ধ্বংস সাধন:

মামলুকরা ছিল মুহাম্মদ আলীর সবচেয়ে বড় বাধা। তারা প্রায় ৬০০ বছরের বেশি সময় ধরে মিসর নিয়ন্ত্রণ করছিল এবং সময়ের সাথে সাথে তাদের শাসন মিসরজুড়ে বিস্তৃত হয়েছিল। মুহাম্মদ আলী মামলুক নেতৃত্ব উৎখাতের পদক্ষেপ নেন। তিনি কায়রো দুর্গে তার পুত্র তুসুনের আরব উপদ্বীপে অভিযানে যাওয়া উপলক্ষে একটি উৎসবে মামলুক নেতাদের দাওয়াত দেন। ১৮১১ সালের ১ মার্চ এর আয়োজন করা হয়। মামলুকরা দুর্গে জমায়েত হওয়ার পর মুহাম্মদ আলির সেনারা তাদের ঘিরে ফেলে হত্যা করে। নেতাদের হত্যার পর মুহাম্মদ আলি তার বাহিনীকে মিশরের বাকি মামলুক শক্তিকে উৎখাতের জন্য নিযুক্ত করেন। 


আরও পড়ুন-

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় গণধর্মান্তর  বা দ্রুত ইসলাম বিস্তারের কারণসমূহ



ঙ. যুদ্ধ বিগ্রহ:

মোহাম্মদ আলী  মূলত একজন  জাদরেল সামরিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, সেজন্য তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি অনেক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। যেমন- 

 

১. হেজাজ দখল:

1811 এবং 12 সালে দুটি অভিযানে তিনি সৌদ পরিবারকে পরাজিত করেন এবং তুর্কি সুলতানের পক্ষে হেজাজের তথা মক্কা মদিনার নিয়ন্ত্রণ নেন।


২. সুদান দখল:

1820 সালে, মোহাম্মদ আলী সুদানে একটি সামরিক অভিযান পাঠান, যেটি তখন একটি স্বাধীন দেশ ছিল। আলী তখন সুদান দখল  করে এটিকে মিসরের একটি অংশ করে তোলে।



৩. প্রাচ্য সমস্যার আবর্তে মুহাম্মদ আলি পাশা: 

গ্রীক স্বাধীনতাকামীদের দমন করার জন্য তিনি তুর্কি সুলতানের পক্ষে তার পুত্রকে গ্রীসে প্রেরণ করে প্রাচ্য সমস্যায় জড়িয়ে পড়েন। যদিও তার বাহিনী গ্রীসে চুড়ান্ত সফলতা লাভ করতে পারেনি।


৪. সিরিয়া দখল:  

ইউরোপে যুদ্ধে ক্ষতিপুরণ স্বরূপ মুহাম্মদ আলি সুলতানের কাছে সিরিয়া দাবি করেন। সুলতান অসম্মতি জানালে ১৮৩১ সালে পুত্র ইব্রাহিম পাশার নেতৃত্বে তিনি সুলতানের সাথে সিরিয়ায় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন এবং সিরিয়া দখল করেন। সিরিয়ার পতনের পর মিশরীয়রা আনাতোলিয়ার দিকে অগ্রসর হয়। কোনিয়ার যুদ্ধে ইবরাহিম পাশা উজিরে আজম রশিদ পাশার নেতৃত্বাধীন উসমানীয় বাহিনীকে পরাজিত করেন। এ অবস্থায় ইউরোপীয় শক্তিগুলো ১৮৩৩ সালের মে মাসে একটি আলোচনার ব্যবস্থা করে। শান্তি চুক্তির শর্ত হিসেবে মুহাম্মদ আলি আনাতোলিয়া থেকে ফিরে আসেন এবং তাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ক্রিট ও হেজাজ প্রদাান করা হয়।


৫. বংশ পরস্পরায় মিসর শাসনের অধিকার লাভ

১৮৩৮ সালের মুহাম্মদ আলি ব্রিটেন ও ফ্রান্সকে জানান যে তিনি উসমানীয় সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে চান। তার এই পদক্ষেপ ইউরোপীয় শক্তিগুলোর অবস্থানের বিপরীত ছিল। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয়রা পুনরায় হস্তক্ষেপ করে। ১৮৪০ সালের ১৫ জুলাই বৃটিশ সরকার মুহাম্মদ আলীকে সিরিয়া ও লেবানন পর্বতের উপকূলীয় অঞ্চল ত্যাগের বিনিময়ে উসমানীয় সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে উত্তরাধিকার সূত্রে মিশরের শাসনাধিকারের সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব দেয়। ১৮৪০ সালে যুদ্ধে পরাজয় ও আত্মসমর্পণের পর মুহাম্মদ আলি শর্ত মানতে রাজি হন।  হেজাজ ও ক্রিটের উপর তার দাবি পরিত্যাগ করার বিনিময়ে তাকে ও তার বংশধরদেরকে উত্তরাধিকার সূত্রে মিশর ও সুদানের শাসনভার অর্পণ করা হয়। 




চ.মিশরের আধুনিকীকরণ ও সংস্কারে মোহাম্মদ আলী পাশার অবদান: 


তুর্কি সুলতান তৃতীয় সেলিমের মত মুহাম্মদ আলীও ইউরোপীয় রীতিতে মিসরের সংস্কার ও আধুনিকায়নের প্রয়োজন উপলব্ধি করেছিলেন যাতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যায়।  যেমন;


১. ভূমি ব্যবস্থাপনা:

 মুহাম্মদ আলী পাশা ইলতিজাম বা ইজারা পদ্বতি বাতিল করে ধীরে ধীরে ভূমি জাতীয়করণ করেন। এর  মাধমে তিনি প্রভাবশালীদের ক্ষমতা খর্ব করেন এবং সরাসরি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।। দুর্নীতির মাধ্যমে ওয়াকফ করা ভূমি বাজেয়াপ্ত করেন। ১৮১৩-১৪ সালে জমি জরিপ সম্পন্ন করেন। এর পর তিনি ইবাদিয়া, সেফতিলক এবং ওহদা পদ্বতিতে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত পন্থায় জমি বরাদ্ধ দেন। এই পদ্বতি গুলোর মাধ্যমেই পরবর্তিতে ভূমিতে ব্যক্তি মালিকানা বিকশিত হয়।


২. রাজস্ব সংস্কার: 

রাজস্ব ঠিক মত আদায়ের জন্য তিনি সামরিক, বেসামরিক ও প্রাদেশিক শাসকদেরকে নির্ধারিত হারে রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেন। শাইখুল বালাদের লাখেরাজ ভূমিতে তিনি রাজস্ব আরোপ করেন। গৃহ,বাগীচা,মসজিদ ও মসজিদ সংলগ্ন ভূমি ব্যতিত অন্য সব ওয়াকফ জমিতে রাজস্ব আরোপ করেন। রাজস্ব ফসলে বা মুদ্রায় দেওয়ার বিধান চালু করেন।


৩. কৃষি সংস্কার:

কৃষির উন্নয়নকল্পে তিনি যন্ত্রপাতি ও বীজ সরবরাহ করেন। কোন এলাকায় কী ফসল হবে তা নির্ধারণ করে দেন। শষ্যমূল্য নির্ধারণ, কৃষকের প্রয়োজনীয় শষ্য বাদ দিয়ে বাকী ফসল গুদামজাতকরণ  এবং অর্থকরী ফসল নীল,আখ,তুলা ও ধান জাতীয় ফসলের প্রতি গুরুত্ব দেন। ফরাসি কৃষিবিদ ‘জুমে’ কে কৃষি উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। রপ্তানি পণ্যে পৃষ্ঠপোষকতা দেন। তিনি সকল উৎপাদককে তাদের পণ্য সরাসরি রাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য করেছিলেন। 


৪. নিজাম ই জাদিদ/ নতুন সেনা বাহিনী গঠন:

১৮১৯ সালে তিনি সামরিক স্কুল স্থাপন করেন। ফরাসি সমরবিদ ‘সিভে’ এর মাধ্যমে তিনি প্রথম নতুন সেনা ব্যাচ গঠন করেন। তিনি পরিশ্রমী ছেলেদের বাছাই করে উচ্চ বৃত্তির ব্যবস্থা করে উচ্চ মানের প্রশিক্ষণ দিয়ে মিসরের জাতীয় সেনা বাহিনী গঠনের শুভ সূচনা করেন। তাদেরকে বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেন। তিনি ১৮ বছর বয়সী ছেলেদের সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করেন।


৫. অস্ত্র নিমার্ণ কারখানা স্থাপন:

 আধুনিক সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে তিনি অস্ত্র উৎপাদনে মনোযোগী হন। কায়রোর কারখানায় মাস্কেট ও কামান প্রস্তুত হত। আলেকজান্দ্রিয়ায় নির্মিত শিপইয়ার্ডে তিনি নৌবাহিনী গড়ে তুলতে শুরু করেন।


আরও পড়ুন-

রেজা শাহ পাহলভী এবং ইরানের আধুনিকায়নে তাঁর অবদান



৬. ব্যবসা বানিজ্যের উন্নয়ন:

ভাস্কোদা গামা ভারতে আসার নতুন জলপথ আবিস্কার করলে আন্তর্জাতিক বানিজ্যে মিসরের গুরুত্ব হ্রাস পায়। মুহাম্মদ আলী পাশা ভিন্ন ভাবে মিসরের বানিজ্যিক গুরুত্ব বৃদ্ধি করা চেষ্টা করেন। তিনি লোহিত সাগর জলদস্যু মুক্ত করেন। তিনি কায়রো ও সুয়েজের মধ্যে উট পরিবহন ব্যবস্থা চালু করেন। আলেকজান্দ্রিয়া ও কায়রোর মাঝে মাহমুদিয়া খাল খনন করে সংযোগ স্থাপন করেন। বৃটেন ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন। মেরিন কলেজ ও বাতিঘর স্থাপন করেন। বিদেশ বানিজ্যে তিনি এক চেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। 


৭. শিল্প উন্নয়ন:

সামরিক ও বানিজ্যিক স্বার্থে তাঁর শিল্পের বিকাশ ঘটে। ফরাসিদের  সহায়তায় ২৯ টি বস্ত্রকল স্থাপিত হয়। বহু কুটির শিল্প গড়ে উঠে। ব্যক্তি মালিকানা বাতিল করে শিল্প কারখানা জাতীয়করণ করা হয়। ১৮৪০ সালে ৪০ হাজার আর ১৮৫০ সালে ৪ লাখ শ্রমিক শিল্পে যুক্ত ছিলো। দলে দলে বিদেশি ব্যবসায়ী শ্রেণীর আগমন ঘটে মিসরে।


৮. শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন: 

মুহাম্মদ আলী পাশা শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতেন। সামরিক,শিল্প,প্রশাসন ও বানিজ্য ইত্যাদি সেক্টরে প্রয়োজনীয় লোক তৈরির জন্য তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষিত ছেলেদের উচ্চ শিক্ষর জন্য ইউরোপে প্রেরণ করেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে তিনি ফরাসি বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগান। ১৮২২ সালে তিনি মিসরে আরব বিশে^র প্রথম ছাপাখানা স্থাপন করেন। এখান থেকে তার সরকারের দাপ্তরিক গেজেট প্রকাশিত হত। তিনি বিদেশি অনেক পুস্তক আরবিতে অনূবাদের ব্যবস্থা করেন। 


৯. সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন:

তিনি কৃষির উন্নয়নকল্পে নীল নদের প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে ১৮ টি খাল খনন করেন। পানি সেচের জন্য ৩৮০০ জলচক্র স্থাপন করেন। 


     ১০. অর্থ ব্যবস্থা:

সময়ের প্রেক্ষিতে তাঁর অর্থের চাহিদা বাড়তেই থাকে। ১৮৪৭ সালে করের পরিমান ৬-৭ গুণ বৃদ্ধি পায়। মিসরিয় মুদ্রার মান কমতে থাকলে তিনি কাগজের মুদ্রা চালু করেন। কর্মচারিদের বেতন এবং ফসলের দাম তিনি এই মুদ্রায় দিলেও কর আদায়ের সময় তিনি বিদেশি ফ্রাংক দাবি করতেন। ফ্রাংক সংগ্রহ করতে কৃষকদেরকে উচ্চ হারে বাট্টা দিতে হতো। 


     ১১.  জন প্রশাসন:

তিনি  স্বৈারাচারী রাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একান্ত সামরিক প্রয়োজনে তিনি সমন্বিত একটি কেন্দ্রীয় প্রশাসন গড়ে তুলেন। যা দুই ভাগে বিভক্ত ছিলো।


  1. আল মজলিশ উল আ’লা আল মালাকি ( বেসামরিক)

  2. আল মজলিশ আল জিহাদিয়া (সামরিক)

এ ছাড়া যেসকল বিভাগের মাধ্যমে তিনি তার প্রশাসন পরিচালনা করতেন সেগুলো হলো;

  1. .অভ্যন্তরীণ বিভাগ

  2. অর্থ ও কোষাগার বিভাগ

  3. যুদ্ধ বিভাগ

  4. নৌ বিভাগ

  5. জন শিক্ষা ও পূর্ত বিভাগ

  6. পররাষ্ট্র ও বানিজ্য 


আরও পড়ুন-


ছ. ইনতেকাল: 

মুহাম্মদ আলি পাশা ১৮৪৯ সালের ২ আগস্ট মারা যান। তাকে কায়রোর মুহাম্মদ আলি মসজিদের কাছে দাফন করা হয়। 

 


  মূল্যায়ন: 


 এ ধরনের বহুবিধ সংস্কারের মাধ্যমে মোহাম্মদ আলী পাশা মিশরীয় সমাজে যে আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছিলেন তাতে কোন সন্দেহ নাই। সে কারণেই তাকে আধুনিক মিশরের জনক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তবে কিছু কিছু ঐতিহাসিক তাকে মোহাম্মদ আলী দ্যা গ্রেট হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন যা অতিরঞ্জিত। কারণ ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে তাকে একজন প্রাচ্যদেশীয় স্বৈরাচারী ছাড়া কিছুই বলা যায় না। কেননা তিনি যে সমস্ত পরিবর্তন করেছিলেন তা তার নিজের স্বার্থেই করেছেন তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। মামলুকদের কে তিনি অত্যন্ত জঘন্য ভাবে বিনাশ করেছেন। পণ্যমূল্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি দেশের মুদ্রা ব্যবহার করলেও কর আদায়ের ক্ষেত্রে তিনি ফরাসি ফ্রাঙ্ক দাবি করতেন যা জনগণের জন্য ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। এছাড়া ১৮ বছর বয়সী সকল ছেলেদের সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করার কারণে বিপুলসংখ্যক জনগন এর বিপক্ষে ছিল। সেনাবাহিনীতে যোগদান থেকে বিরত থাকার জন্য অনেক পিতা-মাতা ইচ্ছাপূর্বক তাদের সন্তানের হাত অথবা পা ভেঙ্গে অথবা শরীরের কোন স্থানে আঘাত করে তাদেরকে ত্রুটিযুক্ত করে ফেলত। তদুপরি, এটি একটি ঐতিহাসিক সত্য যে এই পরিবর্তনগুলি অনেক ক্ষেত্রে জনসাধারণের জীবনে ব্যাপক দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।





আরও পড়ুন-

1 comment:

  1. বলকানের উপর নোট থাকলে পোস্ট করলে উপকৃত হতাম স্যার

    ReplyDelete