Breaking

Saturday 27 August 2022

নবাব আব্দুল লতিফ: বাংলার মুসলিম পুর্নজাগরনের অগ্রদুত

             নবাব আব্দুল লতিফ (Nawab Abdul Latif)

(1828-1893)


নবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলার মুসলমান এবং মুসলিম সমাজ বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলো। রাজনৈতিক ক্ষমতাচ্যুত মুসলমানগন চাকুরি, জমিদারি, লাখেরাজ ভূমি ইত্যাদি হারিয়ে বিত্তহীন কৃষক শ্রেণীতে পরিনত হয়েছে। জমিদার ও নীলকরদের অত্যাচারে প্রজাদের দুর্দশা চরমে পৌছেছে। মুসলিমরা ইংরেজ শাসন এবং ইংরেজি শিক্ষা কোনটাই গ্রহণ করেনি। ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে তারা বহু পিছিয়ে পড়েছে। বৃটিশরা তাদেরকে অবিশ্বাসের চোখে দেখতেছে। মুসলিমদের এই সংকটের দিনে তাদের এক ত্রাণকর্তার আবির্ভাব ঘটে। তিনি হলেন নবাব আব্দুল লতিফ। তিনি বাংলার মুসলিমদেরকে ধ্বংসের পথ থেকে উন্নতির পথে পরিচালিত করেছেন। তার প্রচেষ্টায় মুসলিমরা আধুনিক শিক্ষার দিক নির্দেশনা পেয়েছে।নবাব আব্দুল লতিফ, বাংলার মুসলিম পুর্নজাগরনের অগ্রদুত। বাংলার মসলিমদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষার বিস্তারে নবাব আব্দুল লতিফের অবদান চির স্মরনীয়। উত্তর ভারতের স্যার সৈয়দ আহমদ খানের সাথে তার তুলনা করা যায়।






ক. জন্ম ও পরিচয়:

নবাব আব্দুল লতিফ (Nawab Abdul Latif) ১৮২৮ সালে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারি থানার চতুল উইনিয়নের রাজাপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কাজি ফকির মাহমুদ ছিলেন কলকাতা সদর দিওয়ানি আদালতের আইনজীবী ।


আরও পড়ুন-

মোঙ্গল জাতির পরিচিতি ও উত্থান



খ. শিক্ষা জীবন:

আধুনিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করে তার পিতা তাকে আরবির সাথে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করান। আব্দুল লতিফ কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং অল্প সময়ে তিনি আরবি, ফার্সি, উর্দু এবং ইংরেজি ভাষায় পান্ডিত্য অর্জন করেন।


গ. কর্ম জীবন:

আব্দুল লতিফ (Nawab Abdul Latif) ১৮৪৬ সালে প্রথমে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৮৪৮ সালে তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার অহমষড়-অৎধনরপ এর শিক্ষক হিসেবে যোগদেন। ১৮৪৯ সালে তিনি ডেপুটি মেজিট্রেট হিসেবে যোগদেন এবং ১৮৭৭ সালে প্রেসিডেন্সি মেজিট্রেট পদে পদোন্নতি পান। ১৮৮৪ সালে পেনশন সুবিধাসহ অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর ১৮৮৫ সালে তিনি ভূপালের গভর্নর জেনারেলের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনে নিয়োগ পান, কিন্তু বাংলায় মসুলিমদের স্বার্থে তিনি এমনভাবে জড়িয়ে পড়েছিলেন যে তাঁর আর ভূপালে যাওয়া হয়নি।  


ঘ. পদবী ও সম্মাননা:

  1. ১৮৬২ সালে আব্দুল লতিফ বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য হন। 

  2. ১৮৬৩ সালে তিনি সিভিল ও মিলিটারি সার্ভিস সমূহের পরীক্ষক বোর্ডের সদস্য এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো নিযুক্ত হন। 

  3. ১৮৬৫ সালে কলকাতা মিউনিসিপল কর্পোরেশন গঠিত হলে তিনি এর ‘জাস্টিস অব পিস’ নিযুক্ত হন। 

  4. ১৮৬৭ সালে তিনি সরকারের কাছ থেকে ‘এনসাইক্লোপিডিয় ব্রিটানিকা’ স্বর্ণ পদক লাভ করেন। 

  5. ১৮৭৭ সালে বৃটিশ সরকারের প্রতি আনুগত্য এবং মুসলমানদের প্রতি তাঁর অবদানের জন্য সরকার তাকে সালে ‘খান বাহাদুর’;

  6. ১৮৮০ সালে ‘নবাব’;

  7. ১৮৮৩ সালে ‘সি আই ই’; এবং 

  8. ১৮৮৭ সালে ‘নবাব বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করে। 

  9. এছাড়া তিনি তুর্কি সরকারের কাছ থেকে ‘অর্ডার অব দ্যা মাজেদি অব থার্ড ক্লাস” উপাধি লাভ করেন।



আরও পড়ুন-



ঙ. মুসলিম সমাজের আগ্রগতির ক্ষেত্রে নবাব আব্দুল লতিফের অবদান/

বাংলার মুসলিমদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষার বিস্তারে নবাব আব্দুল লতিফের অবদান


  1. নীলকরদের অত্যাচার থেকে কৃষকদের মুক্তি: 

আব্দুল লতিফ সাতক্ষিরায় ডেপুটি মেজিট্রেট থাকা কালে দরিদ্র মুসলিমদের উপর নীল করদের অত্যাচার দেখে মর্মাহত হন। তিনি কৃষকদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের কাছে অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি নিজেও এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকষর্ণ করেন। ১৮৬০ সালে ‘নীল কমিশন’ গঠনের পিছনে তার বড় অবদান ছিল। এই কমিশনের সুপারিশ অনুসারে সরকার নীল চাষ করা না করার ব্যাপারে কৃষকদেরকে স্বাধীনতা দেয়। এতে কৃষকরা নীলকরদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পায়।


  1. মুসলিমদের মধ্যে বৃটিশ আনুগত্য সৃষ্টি: 

ইংরেজ শাসনকে গ্রহণ না করা, মুসলিমদের জিহাদি আন্দোলন এবং ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের কারণে ইংরেজগণ মুসলমাদেরকে সন্দেহ ও অবিশ্বাস করত। এজন্য তারা মুসলমানদের প্রতি অবহেলা করতে থাকে। ফলে মুসলিমরা সর্বক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়। আব্দুল লতিফ বুঝতে পারেন যে, এই অবস্থা চলতে থাকলে মুসলমানদের ধ্বংস অনিবার্য। প্রথমে তিনি নিজে ইংরেজদের প্রতি গভীর আনুগত্য প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন যে, মুসলিমদের নিজেদের স্বার্থেই জিহাদি মনোভাব ত্যাগ করে ইংরেজদের প্রতি আনুগত্য করা প্রয়োজন।


  1. ভারতকে দারুল আমান ঘোষনা:

ভারতকে যারা দারুল হরব ঘোষনা করেছিলো আব্দুল লতিফ তাদের ঘোষনার অসারতা প্রমান করেন। তিনি বলেন যে, ভারতে মুসলিমরা নির্বিঘেœ ধর্মকর্ম করতে পারে। তাই এটা দারুল হরব নয় এবং সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদের প্রয়োজন নাই। ১৮৭০ সালে কেরামত আলী জৈনপুরি এক পান্ডিত্যপূর্ণ বক্তব্যে আব্দুল লতিফের পক্ষ সমর্থন করে ফতোয়া দেন যে, ভারত দারুল হরবও নয় আবার দারুল ইসলামও নয় বরং ভারত হচ্ছে দারুল আমান। তার নানাবিধ প্রচেষ্টায় মুসলমানদের মাঝে ইংরেজ বিরোধীতা কমতে থাকে এবং সরকার মুসলমানদের কিছু সুযোগ সুবিধা প্রদান করে।


মুসলিম সমাজে ইংরেজি শিক্ষার বিস্তার: 

এ ক্ষেত্রে তার কর্ম প্রচেষ্টা ছিলো বহু মাত্রিক। মুসলিম সমাজে ইংরেজি শিক্ষার বিস্তারে তিনি আজীবন সাধনা করেছেন। যেমন-


  1. ইংরেজি শিক্ষার প্রতি ঘৃনা দূর করা : 

ইংরেজি “বিধর্মীদের ভাষা” আখ্যা দিয়ে তা না শিখে মুসলিমরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছে। তারা সর্বত্র পিছিয়ে পড়েছিলো। আব্দুল লতিফ বুঝতে পারেন যে, ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ না করা পযর্ন্ত মুসলিমদের অবস্থার উন্নতি হবেনা। তিনি বুঝাতে চেষ্টা করেন যে ইংরেজি একটি ভাষা মাত্র, এটাকে ধর্মের দৃষ্টিতে ঘৃনা করার কোন কারণ নাই। তিনি বলেন “ যদি ভারতে কোন ভাষা শিক্ষার্থীদের জীবনকে উন্নত করতে পারে তবে তা হলো ইংরেজি ভাষা। ইংরেজি শিক্ষা লাভ করলে মুসলিমরা অনেক রাজনৈতিক উপকার পাবে এবং এতে সরকারও উপকৃত হবে।


  1. ইংরেজি শিক্ষাকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা : 

আব্দুল লতিফ লক্ষ করেন যে, বৃটিশ সরকার ইংরেজি শিক্ষা পদ্ধতি মুসলমানদের কাছে গ্রহণ যোগ্য করে তুলতে চেষ্টা করেনি। তিনি মনে করেন ইংরেজির সাথে আরবি ও ফার্সির ব্যবস্থা  থাকলে মুসলিমরা তা গ্রহণ করতে দ্বিধা করবেনা । এতে তারা পাশ্চাত্য জ্ঞান লাভ করার পাশাপাশি নিজেদের ধর্ম,কৃষ্টি ও ঐতিহ্য বজায় রেখে চলতে পারবে। তাই ধর্মীয় ও পার্থিব উভয় প্রয়োজন মিটাতে পারে এমন শিক্ষা পদ্ধতি যাতে প্রণয়ন করা হয় সে বিষয়ে তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।


  1. প্রবন্ধ প্রতিযোগীতার আয়োজন :

১৮৫৩ সালে আব্দুল লতিফ “মুসলিম ছাত্রদের পক্ষে ইংরেজি শিক্ষার সুফল” এই শিরোনামে ফার্সি ভাষায় এক প্রবন্ধ প্রতিযোগীতার আয়োজন করেন। শ্রেষ্ঠ বিজয়ীর জন্য এক শত টাকা পুরস্কার ঘোষনা করা হয়। বহু মুসলিম প্রতিযোগীতায় অংশ নেয় এবং অধিকাংশ প্রতিযোগী ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার প্রতি মত প্রকাশ করে। এতে ইংরেজি শিক্ষার প্রতি ছাত্রদের উৎসাহ উদ্দিপনার সৃষ্টি হয়।


আরও পড়ুন-

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী ।। ‍Shah Wali Ullah



  1. মাদ্রাসায় ইংরেজি শিক্ষার মানোন্নয়ন :

কলকাতা মাদ্রাসায় ইংরেজি শিক্ষার মান ছিলো খুবই নিন্ম মানের। মাত্র একজন ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন। আব্দুল লতিফ মাদ্রাসায় ইংরেজি শিক্ষার মান উন্নতির জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ১৮৫৪ সালে ইংরেজি-ফার্সি বিভাগ খোলা হয় এবং উর্দু ও বাংলা শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।


  1. কলেজে মুসলিম শিক্ষার সুযোগ তৈরি :

আব্দুল লতিফ মুসলিমদের জন্য উচ্চ ইংরেজি শিক্ষা ব্যবস্থা দাবি করেন। এর ফলে ১৮৫৪ সালে হিন্দু কলেজকে প্রেসিডেন্সি কলেজে রুপান্তরিত করা হয় এবং হিন্দু-মুসলিম সহ সকল সম্প্রদায়ের শিক্ষার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। যে খানে আগে শুধু হিন্দুরাই পড়াশুনা করতে পারত।


  1. কলকাতা মাদ্রাসা রক্ষা :

১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে কলকাতা মাদ্রাসার ছাত্ররা জড়িত সন্দেহে ছোট লাট হেলিডে মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু বড় লাট বিদ্রোহের সময় আব্দুল লতিফ ও মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্রদের যে রাজভক্তির পরিচয় পান তাতে তিনি মনে করেন যে, মাদ্রাসার ছাত্ররা এতে জড়িত নয়। তিনি মাদ্রাসা চালু রাখেন। ১৮৬৭ সালে আবার কলকতা মাদ্রাসা বন্ধ করার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু এবারও আব্দুল লতিফের প্রচেষ্টায় মাদ্রাসার অস্তিত্ব রক্ষা পায়।


  1. মহসিন ফান্ডের টাকা ও হুগলি কলেজ :

মহসিন ফান্ডের টাকায় হুগলি কলেজ ও স্কুল স্থাপিত হয় এবং এগুলোর ব্যয় নিবার্হ করা হয়। ছাত্রদের বেতন দিতে হতো বিধায় গরিব মুসলিম ছাত্ররা এখানে ভর্তি হতে পারতনা। ফলে মহসিন ফান্ডের টাকায় মুসলিমদের খুব একটা উপকার হতোনা। ১৮৬১ সালে আব্দুল লতিফ হুগলি মাদ্রাসায় ইংরেজি-ফার্সি বিভাগ খোলা এবং ছাত্রদের বৃত্তির সুপারিশ করেন। তিনি আরো আবেদন করেন যে, মহসিন ফান্ডের টাকা দাতার ইচ্ছানুযায়ী শুধু মুসলমাদের শিক্ষার জন্য ব্যয় করা উচিৎ। ১৮৭৩ সালে সরকার আইন পাশ করে মহসিন ফান্ডের টাকা শুধু মুসলিমদের শিক্ষার জন্য ব্যয় করার নীতি গ্রহণ করে। অতঃপর ১৮৭৪ সালে আব্দুল লতিফের উদ্যোগে মহসিন ফান্ডের অর্থে কলকাতা মাদ্রাসার উন্নয়ন এবং ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে নতুন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়।


  1. মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি :

মুসলিমদের শিক্ষার প্রতি সচেতন করা, ইংরেজি শিক্ষায় আগ্রহী করা এবং সরকারের প্রতি তাদের আনগত্যশীল করে গড়ে তোলার জন্য আব্দুল লতিফ ১৮৬৩ সালে ‘মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি’ বা ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে সভা, বক্তৃতা, এবং আলোচনা সভার মাধ্যমে মুসলিমদেরকে আধুনিক শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট করা হয়। বড় লাট এবং ছোট লাটদের এসব অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন জানানো হয় এবং তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এটি ভারতে মুসলিমদের প্রথম সংগঠন। মুসলিম জাগরনে এটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।


আরও পড়ুন-

ভারতীয় মুসলমানদের নবজাগরণে এবং আধুনিক শিক্ষার বিস্তারে সৈয়দ আমীর আলীর অবদান



  1. ছাত্রদের বৃত্তি প্রদান :

গরিব ও মেধাবি ছাত্রদের পড়াশুনার জন্য আব্দুল লতিফ নানা ভাবে চেষ্টা করেন। তিনি ধনী মুসলিমদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ২৮ হাজার টাকার একটি ফান্ড গঠন করেন। ১৮৮৩ সাল থেকে এই ফান্ড হতে গরিব ও মেধাবি মুসলিম ছাত্রদের পুরস্কার ও বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়।


  1. আমীর আলীর প্রস্তাবের প্রতিবাদ:

১৮৮২ সালে সৈয়দ আমীর আলী তাঁর সংগঠনের পক্ষ থেকে লর্ড রিপনের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। এতে তিনি হুগলি, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করে এর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ দ্বারা কলকাতায় ছাত্রাবাস সম্বলিত একটি কলেজ স্থাপনের সুপারিশ করেন। এর বিপরীতে আব্দুল লতিফ ১৮৮৩ সালে লর্ড রিপনের কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে মাদ্রাসা বন্ধের ব্যাপারে আমীর আলীর প্রস্তাবের তিব্র নিন্দা করেন। 

 

  1. অন্যান্য কর্মকান্ড:

স্যার সৈয়দ আহমদ খানের সাথে আব্দুল লতিফের ভালো যোগাযোগ ছিলো। তিনি তাঁর সহানুভূতি ও সহযোগিতা লাভ করেন। আব্দুল লতিফ ‘আলীগড় সায়েন্টিফিক সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠায় তাকে সহযোগিতা করেন।  আব্দুল লতিফ ১৮৬৭ সালে ‘মিস মেরি কার্পেন্টার সমিতি” এবং আলীপুরে ‘রিফরমেটরি ফর জুভেলিন অফেন্ডারস’ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। এছাড়া আব্দুল লতিফ ‘ভারতীয় বিজ্ঞান অনুশীলন সমিতি’, আলবার্ট টেম্পল অব সায়েন্স’, ‘ন্যাশনাল ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’,  এবং ‘বেথুন সোসাইটি’ প্রভৃতি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থার সাথে জড়িত ছিলেন।


চ. সমালোচনা:

তাঁর বেশ কিছু সমালোচনাও রয়েছে। যেমন তিনি মুসলিমদের রাজনীতির বিরোধীতা করেছেন। তাকে প্রাচীন পন্থি নেতা ও সংস্কারক বলা হয় কেননা তিনি ধর্মীয় শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর কর্মকান্ড বাংলার বাইরে ছিলনা যেমনটা আমরি আলীর ছিলো। তার সমিতির কর্মকান্ডও বাংলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। 

 

১৮৯৩ সালে বাংলার মুসলিম পুর্নজাগরনের এই অগ্রদূত নবাব আব্দুল লতিফ (Nawab Abdul Latif) কলকাতায় মারা যান। বাংলার মসলিমদের মধ্যে আধুনিক  শিক্ষার বিস্তারে নবাব আব্দুল লতিফে আজিবন সংগ্রাম করেছেন। তিনি ছিলেন বাংলার মুসলিম পুর্নজাগরনের অগ্রদুত। মুসলিমদের স্বার্থে তার অবদান বাংলার মুসলিমদের কাছে চির অমলিন। তার প্রচেষ্টায় মুসলিমরা আধুনিক শিক্ষা অর্জন করতে শুরু করে এবং একটি মুসলিম শিক্ষিত শ্রেনীর আর্বিভাব ঘটে। যারা পরবর্তিতে রাজনীতিতে মুসলিমদের নেতৃত্ব দেয় এবং হিন্দুদের সাথে সমান তালে অগ্রসর হয়। 


আরও পড়ুন-

মুহাম্মদ আলী পাশা এবং  আধুনিক মিসর     



Md. Billal Hossain

B.A. Honors (1st Class 4th), M.A. (1st Class 2nd), University of Dhaka

BCS General Education

Lecturer

Department of Islamic History & Culture

Chandpur Govt. College, Chandpur.



No comments:

Post a Comment