শাহ ইসমাইল সাফাভী:
রাজনৈতিক উত্থান, রাজত্ব ও কৃতিত্ব
(1502-1524)
ক্ষমতায় আরাহন:
শেখ ইসমাইলের বয়স যখন ১৪ বছর তখন পারস্যের শ্বেত মেষ বংশের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সাফাভীরা এই সুযোগ গ্রহণ করে। বয়সে অপেক্ষাকৃত নবীন হলেও শেখ ইসমাইল সাফাভী বংশের ভবিষ্যৎ প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অসীম সাহস ও সাংগঠনিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেছিলেন। ইতিমধ্যে তিনি একটি ক্ষুদ্র সেনাবাহিনী গঠন করে বাকু ও শামাখা দখল করেন। এরপর তিনি শ্বেত মেষ বংশের অধীনতা অস্বীকার করে আরদাবিলে স্বাধীন শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলেন। শেখ ইসমাইল শ্বেত মেষ বংশের শাসক ইয়াকুবের পুত্র আলওয়ান্দ বেগকে পরাজিত করে সমগ্র আজারবাইজানে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাব্রিজে রাজধানী স্থাপন করেন। পরের বছর শ্বেত মেষ বংশের অপর যুবরাজ মুরাদ খানকে পরাজিত করে ইরাক দখল করেন। এর মাধ্যমে শ্বেত মেষ বংশের পতন ঘটে। এবং শাহ ইসমাইলের উত্থান ঘটে। ১৫০২ সালে তার অভিষেক অনুষ্ঠিত হয় এবং তিনি ‘আবুল মুজাফফর শাহ ইসমাঈল আল হাদি আল ওয়ালি’ উপাধি ধারণ করে পারস্যের সিংহাসনে আরোহন করেন এবং নিজ নামে মুদ্রা জারি করেন।
শিয়া ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা
ক্ষমতা গ্রহণের পর শাহ ইসমাইল শিয়া ধর্মীয় মতবাদকে রাষ্ট্র ধর্মের মর্যাদা দেন। এর ফলে ইরানে দীর্ঘকালের আরবীয় ও মঙ্গলীয় শাসন এবং সুন্নী ইসলামের অবসান ঘটে। শিয়া মতবাদকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দিয়ে শাহ ইসমাইল পারস্যবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন এবং তা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যবহারের সুযোগ গ্রহণ করেন। কেননা পারসিকগণ তাদের শিয়া মতবাদ রক্ষার্থে অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় সর্বদা জাগ্রত থাকতো। তাদের এই ঐক্যের বন্ধন তাদের দেশপ্রেম অথবা শাহের প্রতি রাজনৈতিক আনুগত্য অপেক্ষা ও বেশি শক্তিশালী ছিল। প্রাচীন সাসানিয়াগণ যেমন জরোয়াস্টারবাদ থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করত তেমনি শাহ ইসমাইল এবং তার পরবর্তী বংশধরদের নেতৃত্বে সাফাভীগণও শিয়া মতবাদ থেকে অনুপ্রেরণা ও প্রাণশক্তি লাভ করত। শিয়া মতবাদের প্রতি পারসিকদের এই ভালোবাসার কারণে অদ্যাবধি পারস্য তথা ইরানে শিয়া ধর্ম রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত।
শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন:
শাহ ইসমাইল তার প্রজাদের ধর্মীয় উদ্দীপনা ও নিষ্ঠার পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করে একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠনের প্রয়াস পান। দিয়ারবেকিরের কিজিলবাসগণ এবং তাদের বাহিরে বখতিয়ারী গোত্রের লোকজন থেকে শাহ ইসমাইল সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা লাভ করেছিলেন। এই বখতিয়ারী গোত্রের লোকজন ছিল বিশিষ্ট অশ্বারোহিনী হিসেবে বিখ্যাত। বস্তুত শাহ ইসমাইলের অশ্বারোহী বাহিনী এই বখতিয়ারী গোত্রের লোকদের দ্বারাই গঠিত হয়েছিল। যুদ্ধবিদ্যায় এরা বেশ পারদর্শী ছিল। ইসমাইল সামরিক বাহিনীকে সুসংহত করে পরবর্তী অভিযানে মনোনিবেশ করেন।
রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিধান
শাহ ইসমাইল পারস্যে তাহার ক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত করলেও তিনি চারদিক থেকেই শত্রু দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন। তার উত্তরে উজবেকগণ, পশ্চিমে তুর্কি, দক্ষিণে আরব এবং পূর্বে আফগানদের শক্তিশালী অবস্থান ছিল। ধর্মীয়ভাবে এরা সবাই সুন্নি মতাবলম্বী হওয়ায় শিয়াদের সাথে তাদের প্রতিবেশীসুলভ ভালো সম্পর্কের কোন সম্ভাবনাই ছিল না। ফলে এ সমস্ত রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে শাহ ইসমাইলকে যুদ্ধে জড়াতে হয়। আরব এবং আফগানদের সাথে সরাসরি যুদ্ধ না হলেও উজবেক এবং তুর্কীদের সাথে শাহ ইসমাইলের সংঘর্ষ বাধে।
উজবেকদের সাথে যুদ্ধ
এ সময় উজবেক শক্তির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ যাইবানি খান বাবুর কে বিতাড়িত করে মধ্য এশিয়ার ফারগানা অধিকার করেন। অতঃপর তিনি তৈমুরীয় বংশের সর্বশেষ নরপতি সুলতান হুসাইন মির্জাকে পরাজিত করে হীরাত দখল করেন এবং পারস্যের খোরাসান আক্রমণ করেন। শাহ ইসমাইল উজবেক নরপতি সাইবানি খানকে তার বিরুদ্ধে বিনা উস্কানিতে এইরকম আক্রমণ পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। কিন্তু সাইবানি খান তাতে কর্ণপাত করেননি। ফলে বাধ্য হয়ে শাহ ইসমাইল সাইবানি খানের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন এবং ১৫১০ সালে মার্ভে অনুষ্ঠিত একটি যুদ্ধে উজবেক প্রধানকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত ও হত্যা করেন এবং খোরাসান দখল করেন। এই যুদ্ধে শাহ ইসমাইল সাইবানি খানের হাত থেকে বাবরের এক বোনকে উদ্ধার করে সসম্মানে বাবরের নিকট প্রেরণ করেছিলেন।
হীরাত ও বলখ অধিকার
খোরাসান বিজয়ের পর শাহ ইসমাইল হীরাতের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান প্রেরণ করেন। হিরাত বিনা বাধায় শাহ ইসমাইলের নিকট আত্মসমর্পণ করে। অতঃপর শাহ ইসমাইল বলখ অধিকার করেন এবং বিজয়ী বেশে রাজধানী তাব্রীজে প্রত্যাবর্তন করেন ।
তুর্কিদের সাথে যুদ্ধ
তুর্কি সুলতান দ্বিতীয় বায়জিদ এবং সেলিমের সাথে শাহ ইসমাইলের সংঘর্ষ তার রাজত্বকালের বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এ সংঘর্ষের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে । যেমন-
তুর্কিদের সাথে যুদ্ধের কারণসমূহ
শাহ ইসমাইলের শক্তি বৃদ্ধি:
শাহ ইসমাইলের উত্তরোত্তর শক্তি বৃদ্ধি এবং সামরিক অভিযানে তার সাফল্যে তুর্কি সুলতান দ্বিতীয় বায়জিদ শংকিত হয়ে ওঠেন। প্রজাদের উপর শাহ ইসমাইলের ধর্মীয় প্রভাব তাকে অতিরিক্ত ক্ষমতার অধিকারী করেছিল। শাহ ইসমাইলের এরকম শক্তি বৃদ্ধি তুর্কীদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
শিয়া মতবাদের ব্যাপক প্রসার:
শিয়া মতবাদকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে শাহ ইসমাইল শিয়া মতবাদ প্রচারকল্পে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। তার প্রচারকদের প্রচেষ্টায় শিয়া মতাদর্শ এশিয়া মাইনরে অটোমান সাম্রাজ্যভুক্ত সুন্নী অধ্যুষিত অঞ্চলে বিশেষ করে টেক্কি, কারমান ও দিয়ারবেকির নামক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রদেশগুলোতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এ সমস্ত এলাকার প্রজাগন পারস্যের শাহ ইসমাইলের প্রতি ধর্মীয় আনুগত্য পোষণ করত এবং সময় ও সুযোগ মতো তুর্কি সুলতানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের সহায়তা করত। যা তুর্কি সুলতানদের অস্বস্তির কারণ ছিল।
এশিয়া মাইনরে ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধকরণ:
এশিয়া মাইনরে শিয়া মতাদর্শের এই অগ্রযাত্রায় সুলতান দ্বিতীয় বায়জিদ আশঙ্কা প্রকাশ করলেন যে শিয়া মতবাদ জেনেসারি বাহিনীকে কলুষিত করতে পারে। ফলশ্রুতিতে সুলতান এশিয়া মাইনরে শাহ ইসমাইলের সমর্থকদের ধর্ম প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
শিয়াদের স্থানান্তর:
শিয়া মতাদর্শ প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর সুলতান এশিয়া মাইনর থেকে তার বহু সংখ্যক শিয়া প্রজাকে নববিজিত ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপাঞ্চলে স্থানান্তর করেন। যাতে করে পারস্যের সাথে তাদের সম্পর্ক ও আঁতাত নষ্ট হয়। সুলতান বায়জিদের এ সমস্ত কার্যকলাপে শাহ ইসমাইল অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং উভয়ের মধ্যে তিক্ততা চরম আকার ধারণ করে।
তুর্কি রাজ্যে শিয়া বিদ্রোহ:
এ সময় টেক্কি ও কারমানে এক শিয়া বিদ্রোহ দেখা দেয়। বিদ্রোহীরা শাহ কুলী নামক এক ব্যক্তির নেতৃত্বে কুনিয়া ও কুতিয়া দখল করে ব্রুসার দিতে অগ্রসর হয়। ফলে বাধ্য হয়ে সুলতান দ্বিতীয় বাইজিদ তার প্রধান উজির আলী পাশার নেতৃত্বে সাফাভীদের বিরুদ্ধে বিরাট তুর্কি বাহিনী প্রেরণ করেন। ১৫১১ সালে অনুষ্ঠিত সিভাসের অদূরে সংগঠিত এক খণ্ড যুদ্ধে শিয়া বিদ্রোহীগণ পরাজিত হয় এবং তাদের নেতা শাহ কুলি যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারান।
সেলিম কর্তৃক শিয়া হত্যাকাণ্ড
ইতোমধ্যে সুলতান দ্বিতীয় বায়েজিদের পর 1512 সালে তার ছেলে প্রথম সেলিম ক্ষমতায় আসেন। সুলতান সেলিম অত্যন্ত নিষ্ঠুর প্রকৃতির শাসক ছিলেন। তিনি তুর্কি সাম্রাজ্যের এশিয়া মাইনর থেকে শিয়াদেরকে নির্মূল করে ভবিষ্যতে অটোমান সাম্রাজ্যকে বিপদমুক্ত করার জন্য এক নির্মম পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তার নির্দেশে একটি গোপন তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এদের মধ্যে দেখা যায় যে এশিয়া মাইনর এ তুর্কি প্রজাদের মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার লোক শিয়া মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং কেবল ধর্মীয় কারণেই তারা শাহ ইসমাইলের প্রতি আনুগত্যশীল। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সেলিমের নির্দেশেই এ সকল শিয়া প্রজাদের মধ্য থেকে প্রায় 40 হাজার কে হত্যা করা হয়। আর অবশিষ্টদের মধ্যে অনেককে বন্দী করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। কিছু লোক সুলতানের অনুকম্পা লাভ করে তার দলে যোগদান করে।
শাহ ইসমাইল- সুলতান সেলিম যুদ্ধ-1514
উপরিউল্লেখিত কারণে পারস্যের শাহ ইসমাইল এবং তুর্কি সুলতান সেলিম এর মধ্যকার সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে অবশেষে উভয় নরপতির মধ্যে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে। ১৫১৪ সালের ২৩ আগস্ট তাব্রিজের অধুরে কালদিয়ান নামক প্রান্তরে তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করেও দুর্ধর্ষ ও ক্ষিপ্ত গতিসম্পন্ন পারসিক অশ্বারোহী বাহিনী সেলিমের সাজোঁয়া বাহিনীর কামানের মুখে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি। ২৫ হাজার পারসিক সৈন্য এই যুদ্ধে প্রাণ ত্যাগ করে। শাহ ইসমাইল যুদ্ধে পরাজিত হয়ে প্রাণ নিয়ে পলায়ন করেন। বিজয়ী বেশে সুলতান সেলিম রাজধানী তাব্রিজে প্রবেশ করেন। কিন্তু তার ক্লান্ত পরিশ্রান্ত সৈন্যবাহিনীর পীড়াপীড়ির কারণে তিনি মাত্র আট দিন পরেই স্বদেশ যাত্রা করেন।
ফলাফল:
এই যুদ্ধের ফলে কুর্দিস্তান ও দিয়ারবেকির নামক প্রদেশ দুটি তুর্কি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ইসমাইলের এত দিনের সামরিক সাফল্য ও গৌরব বিশেষভাবে ক্ষুন্ন হয়। তিনি এই পরাজয়ে এতটাই মর্মাহত হয়েছিলেন যে এরপর তার মুখে হাসি দেখিনি যায়নি। তবে শাহ ইসমাইল তুর্কি সুলতান সেলিমের হাতে পরাজিত হলেও এর ফলে নব প্রতিষ্ঠিত সাফাভী রাজ্যের তেমন কোন ক্ষতি হয় নি। সেলিম প্রত্যাবর্তন করলে পারসিকগণ পূর্ব অপেক্ষা বেশি উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে শাহ ইসমাইলের নেতৃত্বে শক্তি বিস্তারে আত্মনিয়োগ করে এবং শিয়া মতাদর্শের প্রতি তাদের আত্মার বন্ধন আরো শক্তিশালী হয়।
বৈদেশিক নীতি
শাহ ইসমাইল তুর্কিদের হাতে এই পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। কিন্তু এককভাবে তার পক্ষে সুলতান সেলিমের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণ করা সম্ভব হবে না বলে তিনি ইউরোপীয় শক্তিবর্গের সহায়তায় সেলিমকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এ সময় হাঙ্গেরির রাজা পঞ্চম চার্লস 1517 সালে শাহ ইসমাইলের নিকট একটি তুর্কি বিরোধী দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষামূলক চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেন। কিন্তু পারস্যের সাথে হাঙ্গেরির অতি দূরত্ব ও অন্যান্য কারণে অবশেষে শাহ ইসমাইল এই প্রস্তাবে সম্মত হননি। কিছু কাল পরই ১৫১৯ সালে সহসাই সেলিমের মৃত্যু হলে শাহ ইসমাইল তুর্কি আক্রমন থেকে বিপদমুক্ত হন।
শাহ ইসমাইলের কৃতিত্ব
সুফি সাধক
পূর্বপুরুষদের ধারাবাহিকতায় শাহ ইসমাইলও একজন সুফি সাধক প্রকৃতির লোক ছিলেন। তিনি ধর্মীয় দর্শন বিষয়ে আলোচনা করতে পছন্দ করতেন। তার এই গুণাবলী তার জনপ্রিয়তার বিশেষ কারণও ছিল।
সাফাভী বংশের প্রতিষ্ঠাতা
শাহ ইসমাইল ইরানি জাতীয়তাবাদ এর প্রতিষ্ঠাতা। দীর্ঘকালের আরবীয় ও মঙ্গলীয় শাসনব্যবস্থা ও প্রভাব প্রতিপত্তির অবসান ঘটিয়ে তিনি স্থানীয় ইরানীদেরকে জাতীয় ক্ষমতায় সমাসীন করেছেন। তিনি সাফাভী বংশের প্রতিষ্ঠাতা। তার প্রতিষ্ঠিত রাজবংশ 235 বছর রাজত্ব করেছে।
ইরানে শিয়া ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা:
ইসমাইল শুধু সাফাভী বংশের প্রতিষ্ঠাতাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন পারস্যের জাতীয় ধর্ম হিসেবে শিয়া মতাদর্শের প্রতিষ্ঠাতা। শিয়া মতাদর্শকে পারস্যের জাতীয় ধর্মের মর্যাদা প্রধানকারী হিসেবে পারসিকদের নিকট তার আসন চির অম্লান হয়ে আছে। তার এই অবদানের জন্য তিনি প্রজাদের নিকট ‘শাহ শীয়ান’ তথা শিয়াদের সম্রাট হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
দক্ষ সামরিক সংগঠক:
অতি অল্প বয়স থেকেই শাহ ইসমাইল সমর বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে সুশৃঙ্খ সেনাবাহিনী গঠন এবং বিভিন্ন রাজ্য জয় তার দক্ষ সামরিক সংগঠক হিসেবে তার পরিচয় বহন করে।
সাম্রাজ্যের সংহতি বিধান:
সাফাভী বংশ প্রতিষ্ঠার পর শাহ ইসমাইল তার রাজ্যের সংহতিবিধানে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছিলেন। চতুর্দিকে সুন্নি শত্রুদের যারা পরিবেশিত থাকলেও তিনি তার রাজ্যের নিরাপত্তা ও সংহতি বিধানে সফল হয়েছিলেন। শিয়া মতাদর্শকে কাজে লাগিয়ে তিনি জনগণের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং সম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিধান এই উভয় দিকে সাফল্য অর্জন করেন।
বিজেতা:
শুধু তুর্কি সুলতানের সাথে পরাজয় ব্যতীত শাহ ইসমাইলের গোটা রাজনৈতিক জীবন ছিল সাফল্যে পরিপূর্ণ। একজন বিজেতা হিসেবেই তিনি এই বংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং দক্ষতার সাথে উজবেক নেতা সাইবানি খানকে পরাজিত করে রাজ্যসীমা বৃদ্ধি করেন।
পারস্যের সাফাভী বংশ: পরিচিতি ও উত্থান
Md. Billal Hossain
B.A. Honors (1st Class 4th), M.A. (1st Class 2nd), University of Dhaka
BCS (General Education)
Lecturer
Department of Islamic History Culture
No comments:
Post a Comment