হযরত উসমান (রা):
প্রাথমিক জীবন, খিলাফত লাভ, চরিত্র ও কৃতিত্ব
প্রাথমিক জীবন
হযরত উসমান (রা.) ছিলেন ইসলামের তৃতীয় খলীফা। তিনি আনুমানিক ৫৭৩ বা ৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে কুরাইশ বংশের অন্যতম শাখা উমাইয়া গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আফ্ফান ও মাতা ছিলেন আরওয়া। তাঁর ডাকনাম ছিল যথাক্রমে আবু আমর ও আব্দুল্লাহ। তাঁর পবিরার ছিল অত্যন্ত ধনী। তিনি শৈশবে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি অল্প বয়স থেকেই কাপড়ের ব্যবসায়ে নিয়োজিত ছিলেন। ব্যবসার মাধ্যমে তিনি প্রভূত সম্পদের অধিকারী হন। তিনি ছিলেন কুরাইশ বংশের অন্যতম ধনী ব্যক্তি। তাই তার নামের শেষে ‘গণী’ (সম্পদশালী বা ধনী) উপাধি যোগ করা হয়। তিনি ইতিহাসে উসমান গণী নামে সমধিক পরিচিত। হযরত উসমান (রা.)এর পূর্বপুরুষ ও রাসূল (সা.) এর পূর্ব পুরুষ একই ধারা থেকে আগত। পরবর্তীকালে মক্কার তত্ত্বাবধানকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় এবং কুরাইশ বংশ হাশেমী এবং উমাইয়া এই দুটি উপগোত্রে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
ইসলাম গ্রহণ
হযরত উসমান (রা.) এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। মুহাম্মদ (সা.) যখন ইসলামের দাওয়াতের কাজ শুরু করেন, তখন তিনি প্রাপ্ত বয়স্ক ছিলেন (৩৪ বছর)। তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনার সাথে তাঁর দেখা একটি স্বপ্নের ঘটনা জড়িত। একদা রাতে উসমান (রা.) স্বপ্নে এক মহান শক্তির দ্বারা আদিষ্ট হলেন “ওগো ঘুমন্ত ব্যক্তি, জেগে ওঠ, মক্কায় আহমদ আগমন করেছে।” এই স্বর্গীয় বাণী তাঁর হৃদয়কে বিগলিত করে দিল। তিনি রাসূল (সা.) এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করলেন। তার চাচা হাকাম (পরবর্তীতে আবু জেহেল) ছিলেন, ইসলামের ঘোর বিরোধী। সে হযরত উসমান (রা.) এর ইসলাম গ্রহণের কথা শুনে তাঁর উপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। তাঁকে গাছের সাথে বেঁধে বেদম প্রহার করে কিন্তু শত অত্যাচার সয়ে তিনি দ্বীন ইসলাম থেকে বিচ্যুত হননি। হযরত উসমান (রা.) ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি রাসূল (সা.) এর দুই কন্যা রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুমকে একজনের মৃত্যুর পর অন্যজনকে বিয়ে করেন। তাই তাঁকে বলা হয় ‘যুন্নুরাইন’ বা দুই-নূরের অধিকারী। রাসূল (সা.) উম্মে কুলসুমের মৃত্যুর পর বলেছিলেন যে“আমার যদি আরেকটি কন্যা থাকতো তাহলে আমি তাকেও হযরত উসমান (রা.) এর সাথে বিবাহ দিতাম”।
খিলাফতের পূর্বে ইসলামের সেবা
আবিসিনিয়ায় হিজরত
যখন ক্রমেই ইসলামের প্রসার হতে শুরু করলো, সেই সাথে মুসলিমদের উপর কুরাইশদের অত্যাচার, যুলুম বেড়ে যেত লাগলো। তখন মহানবী (সা.) এর নির্দেশে কতিপয় সাহাবী তাদের পরিবারসহ আবিসিনিয়ায় হিজরত করলেন। হযরত উসমান (রা.) তাঁর স্ত্রী রুকাইয়াসহ আবিসিনিয়ায় হিজরত করলেন। তিনি সেখানে দুই বছর অবস্থান করেন। এরপর মক্কায় প্রত্যাবর্তন করেন। ৬২২ খ্রিঃ মদীনায় হিজরতের পরে মহানবী (সা.) এর সাথে মিলিত হন।
অর্থ-সম্পদ ইসলামের উদ্দেশ্যে দান
হযরত উসমান (রা.) তাঁর উপার্জিত অগাধ অর্থ প্রাচুর্য ইসলামের উদ্দেশ্যে অকাতরে দান করেন। মদীনার মুসলিমদের পানীয় জলের কষ্ট লাঘবের জন্য তিনি ২০,০০০ দিরহাম মূল্যের বীর রুমা কূপটি ক্রয় করে দেন। এটি ছিল মদীনার একমাত্র পানির কূপ, যা ছিল এক ইহুদীর মালিকানায়। মহানবী (সা.) মদীনায় মসজিদে নববী সম্প্রসারনের ইচ্ছা প্রকাশ করলে, তিনি এর সংলগ্ন জমি ক্রয় করে দেন। তাবুক অভিযানের সময় মহানবী (সা.) যুদ্ধের ব্যয়ভার বহনের জন্য সকলের নিকট আহবান জানালে তিনি নগদ ১০০০ দিনার, ১০০০ উট ও ৭০ টি ঘোড়া এবং সেনাবাহিনীর এক-তৃতীয়াংশের ব্যয়ভার বহন করেন। এতে রাসূল (সা.) তার উপর অত্যন্ত প্রীত হন এবং খুশি হয়ে বলেন, “ আজকের পর যদি উসমান (রা.) এ জাতীয় কোন ভাল কাজ নাও করে, তাতে কোন ক্ষতি নেই।”
যুদ্ধে অংশগ্রহণ
বদর যুদ্ধে হযরত উসমান (রা.) অংশগ্রহণ করতে পারেননি। কারণ তখন তাঁর স্ত্রী রুকাইয়া অসুস্থ ছিলেন। তিনি রাসূল (সা.) এর আদেশে যুদ্ধযাত্রা হতে বিরত থাকেন। এছাড়া সকল যুদ্ধে তিনি বীরত্বের সাথে অংশগ্রহণ করেন। হুদাইবিয়ার সন্ধি স্বাক্ষরের সময় রাসূল (সা.) এর নির্দেশে তিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মক্কার কুরাইশদের সাথে শান্তি আলোচনা করতে যান।
ওয়াহী লেখক
হযরত উসমান (রা.) ছিলেন রাসূল (সা.) এর অন্যতম প্রধান ওয়াহী লেখক। তিনি এই ক্ষেত্রে খ্যাতি লাভ করেন।
আরও পড়ুন-
বিদায় হজ্বের ভাষণ এবং হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কর্তৃক ঘোষিত সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংস্কারাবলী
খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ
খুলাফায়ে রাশেদীনের দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর (রা.) যখন মৃত্যু শয্যায়, তখন তিনি তাঁর প্রতিনিধি নির্বাচনে তৎপর হয়ে ওঠেন। তিনি মজলিস-আল-শুরার পরামর্শের প্রতি আহবান জানান। তিনি উসমান (রা.), আলী (রা.), তালহা, যুবায়ের, আব্দুর রহমান বিন আউফ ও সাদ বিন আবি ওয়াক্কাসকে নিয়ে গঠিত পরিষদের মধ্যে থেকে তৃতীয় খলীফা নির্বাচনের আহবান জানান। উপরে উল্লিখিত প্রত্যেক ব্যক্তি খিলাফতের জন্য যোগ্য ছিলেন। ইসলামের প্রতি সকলেরই অসামান্য ত্যাগ ও অবদান রয়েছে। তবে খিলাফতের গুরু দায়িত্ব সর্বাপ্রেক্ষা যোগ্য ব্যক্তির হাতে অর্পিত হওয়া আবশ্যক। হযরত আলী (রা.) ছিলেন মহানবী (সা.) এর জামাতা ও চাচাতো ভাই। তিনি বীরযোদ্ধা, জ্ঞানী ও বিদ্বান ছিলেন। খিলাফতের উপর তাঁর দাবী ছিল স্পষ্ট। আব্দুর রহমান বিন আউফ (রা.) ছিলেন শ্রদ্ধাভাজন কিন্তু তিনি পূর্বেই খিলাফতের গুরুদায়িত্ব প্রত্যাখ্যান করেন। যুবায়ির (রা.) হযরত উসমানকে সমর্থন করলেন। আব্দুর রহমান এই সময় মক্কা থেকে আগত হজ্জ পালনকারী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে পরামর্শ করলেন। সকলেই হযরত উসমান (রা.) এর পক্ষে রায় দিলেন। এভাবে হযরত উমর (রা.) এর ইন্তিকালের পর ৪র্থ দিনে হযরত উসমান (রা.) ইসলামের তৃতীয় খলীফা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। তালহা (রা.)এই সময় মদীনার বাইরে অবস্থান করছিলেন। তিনি মদীনায় এসে যখন শুনলেন সকলেই এই নির্বাচন সমর্থন করেছে, তখন তিনিও হযরত উসমান (রা,) কে সমর্থন করলেন। তারপর একে একে সবাই খলীফা হযরত উসমান (রা.) এর হাতে বায়াত গ্রহণ করলেন।
হযরত উসমান (রা.) এর চরিত্র ও কৃতিত্ব
হযরত উসমান (রা.) ছিলেন ইসলামের তৃতীয় খলিফা, মহানবীর ঘনিষ্ঠ সাহাবী। ইসলামের প্রতি তার ত্যাগ ও খেদমত ছিল বর্ণনাতীত। তার শাসনকালের শেষ অংশটি বিবেচনা না করলে তিনি ছিলেন একজন সফল ও কৃতিত্বপূর্ণ শাসক।
হযরত উসমান (রা.) এর চরিত্র
মহানবী (সা.) এর নিত্যসঙ্গী
হযরত উসমান ছিলেন রাসূল (সা.) এর ঘনিষ্ঠ সাহাবা, তার একজন নিত্যসঙ্গী, তিনি মহানবী (সা.) এর সাথে ইসলাম প্রচারে সদা নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। তিনি মহানবী (সা.) এর অন্যতম ওয়াহী লেখক ছিলেন।
ইসলামের প্রতি খিদমত
হযরত উসমান (রা.) বিভিন্ন উপায়ে ইসলামের খিদমত করেন। ইসলামের জন্য তিনি তাঁর প্রচুর অর্থ সম্পদ বিলিয়ে দেন। বহু অর্থ ব্যয়ে তিনি মদীনায় এক ইহুদির কাছ থেকে রূমা নামক কূপটি ক্রয় করে মুসলিমদের উদ্দেশ্যে ওয়াক্ফ করে দেন। তিনি প্রায় দুই হাজার ক্রীতদাসকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করেন। মসজিদে নববী সম্পসারণের জন্য তিনি নিজ অর্থে জমি ক্রয় করে দেন। তাবুক অভিযানের সময় তিনি এক তৃতীয়াংশ সেনা বাহিনীর ব্যয়ভার গ্রহণ করেন। ১০০০ দিরহাম দান করেন এবং যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ১০০০ উট দান করেন। হুদাইবিয়ার সন্ধি স্বাক্ষরের সময় তিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কুরাইশদের সাথে সমঝোতা করতে তাদের নিকট গমন করেন।
যুন্নুরাইন উপাধি লাভ
তাঁর উপর রাসূল (সা.) এর ভালবাসা ও স্নেহ ছিল অত্যাধিক। রাসূল (সা.) তাঁর দুই কন্যা রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুমকে একজনের মৃত্যুর পর অপর জনকে হযরত উসমান (রা.) এর সাথে বিবাহ দেন। এ জন্য তাঁর উপাধি হয় যুন্নুরাইন অর্থাৎ দুই জ্যোতির অধিকারী।
ধৈর্য ও নম্রতা
খলীফা উসমান (রা.) ছিল কোমল চরিত্রের অধিকারী। তাঁর সত্যবাদিতা, নম্রতা ও ভদ্রতা ইত্যাদি চারিত্রিক গুণাবলি তাকে মহানবী (সা.) এর নিকট অত্যন্ত প্রিয় করে তুলেছিল। তাঁর নম্র স্বভাবের কারণেই বিদ্রোহীদের অভিযোগের মুখে যখন তাঁর জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছিল, তবুও তিনি তাদের প্রতি কঠোরতা অবলম্বন করতে পারে নি। তাঁর সরলতা ও ধর্মভীরুতার সুযোগ নিয়ে তাঁর নিকট আত্মীয়রা সর্বত্র বিশ্বাস ভঙ্গ করতে শুরু করে। তিনি তাঁর কোন দুর্নীতিগ্রস্থ আত্মীয়র প্রতি কঠোর অবস্থান নিতে পারেন নি। তিনি অযথা রক্তপাত ঘটাতে চাননি। এটি পরবর্তীতে তাঁর চারিত্রিক দুর্বলতা হিসেবে প্রকাশ পায়।
সহজ-সরল জীবনধারী
বিশাল মুসলিম সাম্রাজ্যের খলীফা হওয়া সত্ত্বেও হযরত উসমান (রা.) সরল ও অনাড়ম্বরপূর্ণ জীবন-যাপন করতেন। তাঁর নিজস্ব অর্থ তিনি ইসলামের সেবায় বিলিয়ে দেন। বায়তুল মাল থেকে তিনি কিছুই গ্রহণ করতেন না। তিনি নিজ ব্যবসার আয় হতে সংসার পরিচালনা করতেন।
হযরত উসমান (রা.) এর কৃতিত্ব
সামরিক বিজয়
হযরত উসমান (রা.) সামরিক প্রশাসনের দিক থেকে একজন সফল খলীফা ছিলেন। তার শাসনামলের প্রথম ছয় বছর ছিল মুসলিম বিজয় অভিযানের কাল। এই সময় মুসলিম সেনা বাহিনীর অগ্রযাত্রা সুদূর কাবুল ও বেলুচিস্তান হতে পশ্চিমে ত্রিপলী পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল।
নৌবাহিনী গঠন
হযরত উসমান (রা.) এর সময় সর্বপ্রথম মুসলিম নৌবাহিনী গঠিত হয়। এই আরব নৌবাহিনীর মাধ্যমে মুসলিমগণ ভূমধ্যসাগরে, লোহিত সাগর ও পারস্য উপসাগরে আধিপত্য বিস্তার সক্ষম হয়। ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দ্বীপ যেমন- সাইপ্রাস, রোড্স, সিসিলি, ক্রীট প্রভৃতি দখল করা হয়। ভূ-মধ্যসাগরে বাইজানটাইন শক্তিকে কোণঠাসা করা হয়।
কুরআন সংকলন
হযরত উসমান (রা.) এর অন্যতম কৃতিত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফকে ধারাবাহিক ভাবে সংকলন করা। এই কাজের জন্য তিনি ‘জামিউল কুরআন’ উপাধিতে ভূষিত হন। কুরআন কে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করার কৃতিত্ব তিনি লাভ করেন।
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা
তাঁর শাসনামলের প্রথমার্ধ ছিল শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার কাল। তিনি কুরআন ও হাদীস অনুসারে গণতান্ত্রিক শাসনপদ্ধতি অনুসরণ করেন। জনগণের মতামতকে তিনি গ্রহণ করতেন।
পরামর্শভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা
হযরত উমর (রা.) ন্যায় হযরত উসমান (রা.) পরামর্শভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। মজলিস-আল-শূরার শাসন প্রণালী তিনি টিকিয়ে রেখেছিলেন। তিনি তাঁর রাজধানীতে বিশিষ্ট সাহাবীদের সঙ্গে নিয়মিত রাষ্ট্রীয় বৈঠকে মিলিত হতেন।
প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ
তিনি প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ করেছিলেন। তার সময়ে মুসলিম রাষ্ট্রের সীমানা বর্ধিত হয়। তিনি সিরিয়ার মত বড় একটি প্রদেশকে ৩টি প্রদেশে ভাগ করেন। প্রত্যেক প্রদেশে একজন গভর্ণর নিয়োজিত ছিল। তিনি ৩টি প্রদেশের জন্য একজন গভর্ণরের উচ্চপদস্থ একজন গভর্ণর জেনারেল নিয়োগ করেন। সাইপ্রাস, রোডস দ্বীপসমূহ কে ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। বৃহৎ পাঁচটি প্রদেশের গভর্ণর জেনারেল ছিলেন
যথাক্রমে-
সিরিয়া- মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান,
মিসর- আব্দুল্লাহ ইবনে আবি সারাহ,
বসরা- আব্দুল্লাহ ইবনে আমর,
কুফা- আবু মুসা আল আশ্সারী,
কিন্নিসিরিন- মুসলিম ফেহরী।
বায়তুলমাল প্রশাসন
প্রথম দিকে বায়তুল মাল প্রশাসন ব্যবস্থার উপর খলীফার কড়া নযর ছিল। তিনি যোগ্য ব্যক্তিকে এর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ করেন। উকবা বিন আমের ছিলেন এর তত্ত্বাবধায়ক, যায়িদ বিন সাবিত (রা.) ছিলেন বিচারপতি।
জনহিতকর কার্যাবলি
হযরত উসমান (রা.) ইসলামের খিদমতে নিজের প্রচুর সম্পদ বিলিয়ে দেন। তিনি বিভিন্ন প্রকার জনকল্যাণমূলক কাজ করেন। মদীনার মসজিদ সংষ্কার করে তাতে কাঠের ছাদ ও প্রস্তরের স্তম্ভ সংযোজিত করেন। মাহজুর বাঁধ নির্মাণ করে মদীনাকে প্লাবন থেকে রক্ষা করেন। মদীনায় অবস্থিত ‘বনাত লা’ ইলাহ নামক খাল থেকে আরমায় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। এতে উক্ত স্থান চাষের উপযোগী হয়ে ওঠে। তিনি এছাড়া অসংখ্য রাস্তা-ঘাট সংস্কার, মসজিদ নির্মাণ, বাঁধ নির্মাণও খাল খনন করেন।
সামরিক শক্তি বৃদ্ধি
সামরিক শক্তি হযরত উসমান (রা.) এর শাসনে বৃদ্ধি পায়। তিনি এক্ষেত্রে দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর (রা.) এর নীতি অনুসরণ করেন। সেনা বাহিনীর ব্যারাক সংখ্যা বৃদ্ধি, যুদ্ধের সরঞ্জাম, ঘোড়া ও উট ইত্যাদির সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করেন।
জমিদারী ও জায়গীরদারী প্রথার উদ্ভব
হযরত উসমান (রা.) মুসলিমদেরকে বিজিত দেশে জমি ক্রয়ের নিষেধাজ্ঞা তুলে দেন। তা না হলে শহর ও গ্রামীণ লোকদের সাম্যতা রক্ষা হত না। শহরের লোকদিগকে গ্রামে বসবাস করতে না দিলেও, গ্রাম থেকে লোকেরা এসে শহরে বসবাস করছে, এতে করে অনেক অশালীন উপকরণ গ্রাম হতে শহরে চলে আসছিলো। এই আদেশের ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে জমি ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে মুসলিম রাষ্ট্রের জমিদারী ও জায়গীরদারী প্রথার সূত্রপাত হয়।
আরও পড়ুন-
খলিফা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ।। ইসলামের পঞ্চম খলিফা
আরও পড়ুন-
মুহাম্মদ (স.) এর হিজরত: কারণ ও ফলাফল
আরও পড়ুন-
মুহাম্মদ (স.) এর নবুওয়াত লাভ এবং ঘটনাবহুল মক্কী জীবন
সংগৃহীত ও পরিমার্জিত
External Link
http://www.ebookbou.edu.bd/Books/Text/OS/HSC/hsc_1856/Unit-06.pdf
Md. Billal Hossain
B.A. Honors (1st Class 4th), M.A. (1st Class 2nd), University of Dhaka
BCS General Education
Lecturer
Department of Islamic History & Culture
Chandpur Govt. College, Chandpur.
No comments:
Post a Comment