Breaking

Monday 6 March 2023

মারওয়ান: পরিচিতি উত্থান এবং খিলাফত লাভ

  

মারওয়ান: 

পরিচিতি উত্থান এবং খিলাফত লাভ


খলিফা দ্বিতীয় মুয়াবিয়া (683)

৬৮৩ সালে ইয়াজিদের মৃত্যুর পর তার ছেলে দ্বিতীয় মুয়াবিয়া ক্ষমতায় আসেন। এ সময় সাম্রাজ্যের  সর্বত্র  বিদ্রোহ বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং উমাইয়া খেলাফত দামেস্ক এবং এর আশেপাশের এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় মুয়াবিয়া শান্তশিষ্ট ও নম্র ভদ্র ছিলেন। তিনি তার পিতা ইয়াজিদের অনৈসলামিক কার্যকলাপ মোটওে পছন্দ করতেন না। তাছাড়া  শাসন কার্যের প্রতি তিনি খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না। কয়েক মাস রাজকার্য পরিচালনা করার পর তিনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ত্যাগ করেন। এর কিছু কাল পর তিনি ইন্তেকাল করেন। 





খলিফা খালিদ ইবনে ইয়াজিদ (683)

দ্বিতীয় মুয়াবিয়ার স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ত্যাগ করার পর খিলাফতের দায়িত্বে আসেন ১৭ বছর বয়সি তার ভাই খালিদ। কিন্তু খালিদ শাসনকার্য  পরিচালনা করার মত যোগ্য ছিলেন না। ফলে উমাইয়ারা একজন যোগ্য শাসক খুঁজতে থাকে। 



আরও পড়ুন-

বিদায় হজ্বের ভাষণ এবং   হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কর্তৃক ঘোষিত সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংস্কারাবলী 



মারওয়ান ইবনে হাকাম

পরিচিতি ও উত্থান: 

মারোয়ান ইবনে হাকাম উমাইয়া বংশের মারওয়ারি শাখার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি হযরত ওসমানের চাচাতো ভাই ছিলেন। তার ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে উমাইয়া বংশের নেতৃত্ব হারবীয় শাখার পরিবর্তে হাকামীয়দের  হাতে চলে আসে। মারওয়ান ইবনে হাকাম হযরত ওসমানের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি হযরত ওসমানের চিঠি জাল করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। সিফফিনের যুদ্ধে তিনি হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর পক্ষে অবলম্বন করেন। হযরত মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খেলাফত কালে মারওয়ান হেজাজের প্রাদেশিক গভর্নর ছিলেন। তার উচ্চাভিলাষী মনোভাব দেখে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বরখাস্ত করেন। এরপর কয়েক বছর তিনি অজ্ঞাত জীবন যাপন করেন। ইয়াজিদের আমলে তিনি তার রাজদরবারে আশ্রয় গ্রহণ করেন। কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার পর মদিনায় বিদ্রোহ দেখা দিলে মারওয়ান ইয়াজিদকে মদিনা আক্রমনের পরামর্শ দেন। 


জাবিয়া সম্মেলন এবং মারওয়ানের খিলাফত লাভ:

উমাইয়া খিলাফতের আসনে কে সমাসীন হবেন এ নিয়ে উমাইয়া নেতৃবৃন্দ জাবিয়া নামক সম্মেলনে একত্রিত হয়। উত্তরাধিকার প্রশ্নে উমাইয়ারা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে । জাবিয়া সম্মেলন ৪০ দিন যাবত স্থায়ী হয়। একটি পক্ষ মারওয়ান ইবনে হাকাম কে সমর্থন দেয় আরেকটি পক্ষ সমর্থন দেয় ইয়াজিদের পুত্র খালিদকে। পরিশেষে সিদ্ধান্ত হয় যে খালিদ নাবালক বিধায় মারওয়ান খলিফা নিযুক্ত হবেন। মারোয়ানের পর প্রথমে খালিদ অতঃপর আমর বিন সাঈদ আল আস খলিফা হবেন।  জাবিয়া সম্মেলনের এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক মারওয়ান খলিফা নির্বাচিত হন। 


ক্ষমতা সুদৃঢ় করুন:

মারওয়ান রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ইয়াজীদের বিধবা স্ত্রী এবং খালিদের মাতাকে বিবাহ করে সবার সমর্থন লাভ করেন। তিনি কৌশলে আমার বিন সাঈদ এবং ওবায়দুল ইবনে জিয়াদকে নিজ পক্ষে নিয়ে আসেন। নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য মুদারীয় ও হিমারীয় দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখেন এবং হিমারিয়াদের সমর্থন লাভ করেন। লোভ দেখিয়ে, তরবারির ভয় দেখিয়ে এবং নানাবিধ কৌশল অবলম্বন করে মারোয়ান সাম্রাজ্যে তার অবস্থান সুসংহত করেন।  



আরও পড়ুন-



মারজ রাহিতের যুদ্ধ: 684

মুদারীয় গোত্রের প্রধান যাহহাক ইবনে  কাসিম আল ফিহরী হেজাজের খিলাফতের দাবিদার আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর এর প্রতি সমর্থন দিয়ে সিরিয়ার একটি বিশাল এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেন। হিমারীয়দের সহায়তায় মারওয়ান যাহহাক এর  বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান প্রেরণ করলে মারজ রাহিতের যুদ্ধে যাহহাক পরাজিত ও নিহত হন। কিন্তু আব্দুল ইবনে জুবাইর যাহহাক এর সমর্থনে কোন সামরিক সাহায্য প্রেরণ করেননি। এর ফলে  সমগ্র সিরিয়াতে মারওয়ানের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।  


মিশর পুর্নদখল:

উমাইয়াদের বিশৃঙ্খলার সুযোগে মিশরেও আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর এর পক্ষে বিদ্রোহীদলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সিরিয়ায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর মারওয়ান মিশরের দিকে যাত্রা করেন। আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর এর পক্ষ থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা না পেয়ে মিশরের বিদ্রোহীরা মারওয়ানের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে। মিশরে দখলের পর পুত্র আব্দুল আজিজ কে মিশরের ওয়ালী নিযুক্ত করে দামেস্কে প্রত্যাবর্তন করেন।  


বিভিন্ন প্রদেশে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা: 

তারপর মারওয়ান একে একে কিন্নসিরিন, হিমস, কুফা, জেরুজালেম, জর্দান প্রভৃতি প্রদেশগুলোতে পূর্ণ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। 


উত্তরাধিকারী মনোনয়ন:

জাবিয়া সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মারওয়ানের পর ইয়াদিদের পুত্র খালিদ খলিফা হবেন। কিন্তু মিশর বিজয় সম্পন্ন করে পথিমধ্যে মারওয়ান জাবিয়া সম্মেলনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নিজ পুত্র আব্দুল মালিক অতঃপর আব্দুল আজিজকে পরবর্তী উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন। 


মারওয়ানের মৃত্যু:

৬৮৫ সালে মারওয়ান মৃত্যুবরণ করেন। কথিত আছে যে খালিদকে বঞ্চিত করার কারণে মারওয়ানের বর্তমান স্ত্রী তথা খালিদের মা নির্মমভাবে শ্বাসরুদ্ধ করে মারওয়ানকে হত্যা করেন। ভিন্ন বর্ণনা মতে মারোয়ান প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মারওয়ানের মৃত্যুর সাথে সাথে একটি ষড়যন্ত্রকারী ও অত্যাচারী জীবনের অবসান ঘটে। 



মারওয়ানের চরিত্র ও কৃতিত্ব:

মারওয়ান একজন সুচতুর, বুদ্ধিমান, কুটকৌশলী, রাজনৈতিজ্ঞ, নীতি জ্ঞানহীন, উচ্চাভিলাষী, উচু মানের সংগঠক এবং ষড়যন্ত্রে সিদ্ধহস্ত ব্যাক্তি ছিলেন। ঐতিহাসিক আমির আলীর মতে ‘বার্ধক্য তার ষড়যন্ত্রের প্রতিভাকে কিছু মাত্র ম্লান করতে পারেনি’। বিশৃংখল উমাইয়াদেরকে সঙ্ঘবদ্ধ করে স্থায়ীভাবে তাদের ক্ষমতায় বসাতে তার বিশেষ কৃতিত্ব ছিল। 


শিয়াগণ কোন উমাইয়া শাসককিই স্বীকার করেনি কিন্তু মারওয়ানকে সুন্নিরাও স্বীকার করে না। জালাল উদ্দিন সুয়ূতি, ইবনে হাজার আসকালানী এবং হাম্বলী মারওয়ানকে জুবাইর এর  এর বিরুদ্ধে একজন বিদ্রোহী হিসেবে মনে করেন। কারণ তার প্রতি জনসাধারনের এবং আলেম ওলামাদের সমর্থন ছিল না যা  ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর এর প্রতি। 



আরও পড়ুন-
খলিফা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ।। ইসলামের পঞ্চম খলিফা 



আরও পড়ুন-

মুহাম্মদ (স.) এর হিজরত: কারণ ও ফলাফল



আরও পড়ুন-
মুহাম্মদ (স.) এর নবুওয়াত লাভ এবং ঘটনাবহুল মক্কী জীবন





গ্রন্থপঞ্জি:


  1. P.K, Hitti, History of the Arabs, third edition revised, Macmillan and Company Limited, London,1946, 

  2. Sayed Amir Ali, A Short History of the Saracens, Macmillan and Company Limited, London, 1916

  3. S.W, Muir, The Caliphate, its Rise, Decline & Fall, The Religious Tract Society, Piccadilly, London. 1891

  4. পি,কে হিট্টি, আরর জাতির ইতিহাস , (বাংলা অনুবাদ)

  5. সৈয়দ আমীর আলী, আরব জাতির ইতিহাস, (বাংলা অনুবাদ)

  6. প্রফেসর ড. মো আতিয়ার রহমান ও ড. মো. ইব্রাহীম খলিল,মুসলমানদের ইতিহাস (৫৭০-৭৫০)

  7. মোহা. আল মুস্তানছির বিল্যাহ, ইসলামের ইতিহাস: হযরত মুহাম্মদ (সা.), খোলাফায়ে রািশেদিন ও উমাইয়া খিলাফত

  8. মাহবুবুর রহমান,মুসলমানদের ইতিহাস (570-1517), বুকস ফেয়ার, ঢাকা, 2015






Md. Billal Hossain

B.A. Honors (1st Class 4th), M.A. (1st Class 2nd), University of Dhaka

BCS General Education

Lecturer

Department of Islamic History & Culture

Chandpur Govt. College, Chandpur.






No comments:

Post a Comment